রোয়ানুতে বরিশালে সোয়া ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বরিশাল বিভাগে প্রায় সাড়ে ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতিসাধন হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এলজিইডি জানিয়েছে, শুধু বরিশাল বিভাগেই এমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা মেরামত বা পুনর্বাসনে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৯৭ লক্ষাধিক টাকা।
রোয়ানুর প্রভাবে বরিশাল বিভাগে এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), মৎস্য অধিদপ্তরে প্রায় সোয়া ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এলজিইডি সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগের গ্রামীণ সড়কগুলোর মধ্যে পটুয়াখালী জেলায় ২৯ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার, বরগুনা জেলায় ৭ দশমিক ৮২ কিলোমিটার, বরিশালে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার, ভোলায় ৬৭ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, পিরোজপুরে ৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং ঝালকাঠিতে ৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়া বরিশাল বিভাগের উপজেলা সড়কগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীতে ৭১ দশমিক ১ কিলোমিটার, বরগুনায় ১৬ দশমিক ৮০৫ কিলোমিটার, বরিশালে ১৩ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার, ভোলায় ১৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার, পিরোজপুরে ৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং ঝালকাঠিতে ১৩ দশমিক ২৬ কিলোমিটার ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয়েছে।
অপরদিকে ইউনিয়নের সড়কগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীতে ৩৫ দশমিক ৮১ কিলোমিটার, বরগুনায় ১৭ দশমিক ২৩৬ কিলোমিটার, বরিশালে ০ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার, ভোলায় ২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার, পিরোজপুরে ৮ কিলোমিটার এবং ঝালকাঠিতে ৫ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পুরো বরিশাল বিভাগে সড়কের ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে পটুয়াখালীতে কাঁচা রাস্তা ৪ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার ও পাকা রাস্তা ১৩১ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার, বরগুনায় কাঁচা রাস্তা ২ দশমিক ১০ কিলোমিটার ও পাকা রাস্তা ৩৯ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার, বরিশালে পাকা রাস্তা ১৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার, ভোলায় পাকা রাস্তা ১১৩ কিলোমিটার, পিরোজপুরে পাকা রাস্তা ২২ কিলোমিটার এবং ঝালকাঠিতে পাকা রাস্তা ২১ দশমিক ১২ কিলোমিটারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বরিশাল বিভাগে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুরে কাঁচা রাস্তার ক্ষতি না হলেও পটুয়াখালী ও বরগুনায় কাঁচা ও পাকা উভয় সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৫৯টি ব্রিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে পটুয়াখালীতে চারটি, বরগুনায় ৪৮টি, ভোলায় একটি, পিরোজপুরে দুটি এবং ঝালকাঠিতে চারটি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বরিশাল বিভাগজুড়ে সাতটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে তিনটি এবং ভোলায় চারটি রয়েছে। রাস্তা, ব্রিজ ও ভবনসহ মোট মেরামত বা পুনর্বাসনে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৬ কোটি ৬২ লক্ষাধিক টাকা। এসব রাস্তা, ব্রিজ, ভবন উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ অঞ্চলেই অবস্থিত বলে জানিয়েছেন এলজিইডি বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন।
এ প্রকৌশলী আরো জানান, বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা এ-সংক্রান্ত প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন এরই মধ্যে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে কাঁচার চেয়ে পাকা সড়কের পরিমাণই বেশি। এ হিসাবে বেশি রাস্তার ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালীতে, বেশি ব্রিজ ক্ষতি হয়েছে বরগুনায় এবং ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোলায়। অপরদিকে সবচেয়ে কম রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বরিশালে।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাঁচা বেড়িবাঁধ, পাকা বেড়িবাঁধ এবং নদীতীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিভাগের ছয় জেলায় ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এর মধ্যে ভোলা ও পটুয়াখালী জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এদিকে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর রোয়ানুর প্রভাবে প্রায় ২৪ হাজার পুকুর, ঘের, দীঘি প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করেছেন।