শিশু বীথির চিকিৎসায় যাঁরা এগিয়ে এলেন

অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত শিশু বীথি আক্তারের (১২) চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন অনেকেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার পাশে দাঁড়িয়েছে। আর মেয়ের চিকিৎসা হচ্ছে দেখে স্বস্তি পাচ্ছেন বীথির মা-বাবা।
গত সোমবার বীথির মুখের অতিরিক্ত লোম লেজারথেরাপির মাধ্যমে অপসারণ শুরু হয়েছে। এতে তার লোমশ মুখের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক মসৃণ হয়ে উঠেছে।
বীথির চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা নিয়ে গতকাল বুধবার সকালে এনটিভি অনলাইন কথা বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হরমোন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে। কথা হয় বীথির বাবার সঙ্গেও।
ডা. ফরিদ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রথমে শিশুটিকে যখন হাসপাতালে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়; তখন আমি বললাম, তাকে হাসপাতালের ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু তখন বিছানা খালি নেই। তাই ভর্তি হয়ে যেকোনো জায়গায় আপাতত থাকতে বলি। কিন্তু তারা ভর্তি না হয়ে চলে যায়। পরে একটি বিছানা খালি হওয়ার পর আমরা নিজের চেষ্টায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে ভর্তি পরীক্ষা করে দেখতে পাই, বীথির হরমোনজনিত কোনো সমস্যা নেই। তার জরায়ু ঠিক অবস্থা রয়েছে। শরীরের হাড়সহ অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকঠাক রয়েছে।’
ডা. ফরিদ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বীথির চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগবে। এরই মধ্যে গ্রিন রোডে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী লেজারথেরাপি ফ্রি করে দিয়েছেন, যা করতে প্রায় দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন হতো। এ ছাড়া ডাক্তাররা নিজেদের চেষ্টায় অর্থ তহবিল গঠন করছেন। তবে মিডিয়া নিউজ প্রকাশের পর এখন অনেকখানি সহজ হয়ে গেছে। একজন মন্ত্রী বীথির চিকিৎসার জন্য খরচ বহন করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
বীথির বাবা আবদুর রাজ্জাক এনটিভি অনলাইনকে জানান, বীথিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা ফ্রি করে দিয়েছে। তাঁর বিকাশ অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেশ-বিদেশ থেকে ৮৫ হাজার টাকা জমা হয়েছে। এ ছাড়া একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা এবং কানাডাপ্রবাসী এক লোক ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা অনুদান এসেছে।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে থাকতে হবে। তাই কর্তৃপক্ষ বলেছে, আরো টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
বীথির বাবা আরো জানান, বীথির জন্ম থেকেই মুখে দাড়ি-গোঁফসহ সারা শরীরে লোম ছিল। এক বছর আগে স্তন অস্বাভাবিক আকারে বাড়তে থাকে। স্তনে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এর আগে সাত বছর বয়সে দাঁত পড়ে যায়। পরে আর সেই দাঁতও গজায়নি।
গত ১৬ এপ্রিল বিএসএমএমইউর ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বীথিকে ভর্তি করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার জয়ভোগ গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের তিন সন্তানের মধ্যে বড় বীথি। জয়ভোগ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।
গত এক বছর ধরে বীথির শরীরে দেখা দেয় নতুন নতুন সমস্যা। তার স্তন অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। এখন তা নেমে গেছে পেটের নিচ পর্যন্ত। স্তনের ভারে সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না সে। প্রচণ্ড ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করে সব সময় কান্নাকাটি করে। দিনমজুর বাবা কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে ঋণ করে মেয়েকে নিয়ে আসেন ঢাকায়।
বীথিকে নিয়ে ২৬ এপ্রিল এনটিভি অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন।