বীথির মুখের অতিরিক্ত লোম অপসারণ

অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত শিশু বীথি আক্তারের (১২) মুখের অতিরিক্ত লোম লেজার থেরাপির মাধ্যমে অপসারণ শুরু হয়েছে। এতে তার লোমশ মুখের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক মসৃণ হয়ে উঠেছে।
বীথিকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ করতে স্তনের অস্ত্রোপচারসহ তিন ধাপে চিকিৎসা করা হবে।
বীথির চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আজ বুধবার সকালে এনটিভি অনলাইন কথা বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হরমোন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে। কথা হয় বীথির বাবার সঙ্গেও।
ডা. ফরিদ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ভর্তির পর পরীক্ষা করে তাঁরা দেখতে পান বীথির হরমোনজনিত কোনো সমস্যা নেই। তার জরায়ু ঠিক অবস্থা রয়েছে। শরীরের হাড়সহ অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকঠাক রয়েছে।
মূলত তিনটি সমস্যা ছাড়া পুরো শরীরে আর কোথাও কোনো সমস্যা নেই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়টির চিকিৎসকরা বোর্ড মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন বীথির কসমেটিক সার্জারি করে প্রথমেই মুখের পশম সরাতে হবে। সেই হিসেবে প্রথম ধাপে লেজার থেরাপি করা হয়।
এই থেরাপিতে চিকিৎসকরা সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান ডা. ফরিদ উদ্দিন। বীথির বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বিনা মূল্যে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক। শুরুতে গত সোমবার সন্ধ্যায় পান্থপথ গ্রিন রোডে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী লেজার থেরাপির মাধ্যমে বীথির মুখের লোম পরিষ্কার করেন।
এ বিষয়ে ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী আমাদের অনুরোধে প্রায় দেড় লাখ টাকার এই লেজার থেরাপি বিনা মূল্যে করে দেন। এ ছাড়া ডাক্তার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সমাজের অনেক বিত্তবান লোক আপনাদের সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বীথির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’
এই চিকিৎসক এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, ‘আগামী ৩০ মে বীথির স্তনের অপারেশন করা হবে। এর জন্য প্রায় ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হবে। তবে এ চিকিৎসা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বিনা খরচে করে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী আর্থিক সহযোগিতা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এর পরই আমরা মুখের মাড়ির অপারেশন করব। এ ছাড়া বীথির সিটি স্ক্যানসহ তার পুরো শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও ফ্রিতে করা হয়েছে।’
সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বীথি তার বিছানায় শুয়ে আছে। মুখে আগের মতো দাড়ি-গোঁফ নেই। তবে ছেঁটে ফেলার চিহ্ন রয়েছে। এ সময় ডা. ফরিদ উদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে সে।
বীথির বাবা আবদুর রাজ্জাক জানান, বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা বীথিকে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরীর কাছে নিয়ে যেতে বলেন। প্রফেসর কবীর চৌধুরী বলেছেন, লেজার থেরাপিতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু তিনি বীথির কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেবেন না। ফ্রিতে বীথিকে লেজার থেরাপি দেবেন।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রফেসর কবীর চৌধুরী জানিয়েছেন বীথিকে অন্তত ২০ বার থেরাপি দেওয়া লাগবে। প্রথম থেরাপির ২০ দিন পর তাকে আবার থেরাপি দেওয়া হবে।
বীথির বাবা জানান, বীথির জন্ম থেকেই মুখে দাড়ি-গোঁফসহ সারা শরীরে লোম ছিল। এক বছর আগে স্তন অস্বাভাবিক আকারে বাড়তে থাকে। স্তনে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এর আগে সাত বছর বয়সে দাঁত পড়ে যায়। পরে আর সেই দাঁতও গজায়নি।
গত ১৬ এপ্রিল বিএসএমএমইউর ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বীথিকে ভর্তি করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার জয়ভোগ গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের তিন সন্তানের মধ্যে বড় বীথি। জয়ভোগ পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।
গত এক বছর ধরে বীথির শরীরে দেখা দেয় নতুন নতুন সমস্যা। তার স্তন অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। এখন তা নেমে গেছে পেটের নিচ পর্যন্ত। স্তনের ভারে সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না সে। প্রচণ্ড ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করে সবসময় কান্নাকাটি করে সে। দিনমজুর বাবা মেয়ের কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে ঋণ করে মেয়েকে নিয়ে আসেন ঢাকায়।
বীথিকে নিয়ে ২৬ এপ্রিল এনটিভি অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন।