মেঘালয়ে গুলিবিদ্ধ ভারতীয় বাংলাদেশে চিকিৎসাধীন

ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর নাম লাস্টিং ডি মারাগ (৪০)। তিনি মেঘালয়ের রংঝু বস্তি এলাকার বাসিন্দা। গতকাল সোমবার পিঠে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পার্থ পাল চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে জানান, লাস্টিং নামের ওই রোগীর মেরুদণ্ড ভেদ করে ফুসফুসের কাছে গুলি চলে গেছে। এই ধরনের অস্ত্রোপচার করার মতো ব্যবস্থা ময়মনসিংহে না থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার সময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তির স্লিপ কাটেন লাস্টিং। পরে তাঁকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির সময় তিনি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের উত্তর ইউপির শ্রীপুরের ঠিকানা ব্যবহার করেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের রেকর্ডে দেখা যায় রোগীর রোগের বর্ণনায় ‘বুলেট ইন চেস্ট’ লেখা রয়েছে। এর ওপর পুলিশ কেস লেখা সিল মারা রয়েছে।
তবে ভারতীয় নাগরিক লাস্টিং ডি মারাগ কীভাবে কোথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বা কীভাবে বাংলাদেশের সীমান্তের এপারে এসেছেন সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই। আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ব্যবহার করছে আমাদের এলাকার নাম। কিন্তু ঘটনা পুরাটা ঘটছে ইন্ডিয়ার মধ্যে। আমি গিয়েছিলাম শুনে। নিজেই গিয়েছিলাম।’
ওসি জানান, ভারতের মেঘালয়ের সাউথ ওয়েস্ট খাসী হিল জেলার রানীকশ থানার রংঝু বস্তি এলাকায় একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে শিলং অনেক দূরে হওয়ায় আহত লাস্টিং চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, ‘সেই সময় বিজিবি ছিল না, এই ফাঁক দিয়ে হয়তো গেছে। মূল ঘটনা এটাই। একজনই এসেছে।’
এ সম্পর্কে ২৮ বিজিবির অধিনায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওইটা খবর নিছিলাম। এটা হলো গাছ পড়ে ব্যথা পাইছে সে। এটা এমনি গোলাগুলির কিছু না।’
তবে তাহিরপুর থানার ওসি ভারতের ভেতরে সংঘর্ষে আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে বিজিবি কর্মকর্তাকে জানালে বিজিবির অধিনায়ক বলেন, ‘ওসির সাথে আমার তো কথা হয় নাই। এ রকম যদি হয়ে থাকে তাহলে ময়মনসিংহের পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আহত ব্যক্তিকে ময়মনসিংহ থেকে রাজধানীতে স্থানান্তর করা হয়েছে জানালে ২৮ বিজিবির অধিনায়ক বলেন, ‘যদি সে বৈধভাবে এসে থাকে তাহলে তো সমস্যা নেই। কারণ বাংলাদেশের লোক চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ায় যায় না? আমাদের তো হাজার হাজার লোকজন যাচ্ছে ইন্ডিয়াতে ট্রিটমেন্টের জন্য। সংঘর্ষের ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করছিলাম। আমি কোম্পানি কমান্ডারের সঙ্গে কথা বললাম। উনি আমাকে গোলাগুলির বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।’
বিজিবির কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমি শুনছিলাম যে লোকটার ঠিকানা হলো জঙ্গলবাড়ীর তাহিরপুরে। এটা অরিজিনালি হলো ইন্ডিয়ার। এর বাড়ি হলো রংঝু বস্তি। ওর নামও ঠিক আছে বাপের নামও ঠিক আছে। রংঝু বস্তি এলাকায় বাড়ি।’
ভারতের রোগী বাংলাদেশে ঢুকল কীভাবে জানতে চাইলে আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিনিধিকে তাহিরপুর থানার ওসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এটাই তো কথা। আমি গেছি তো। তবে ঘটনা হলো ইন্ডিয়ার ভেতরে। এ জন্য ওখানে যাইনি আমি। বর্ডারে গিয়ে ওদের দুজনের সাথে কথা বলেছি আমি। যে জখম হয়েছে তার ভায়রা এবং আরো একজন ওদের যে চেয়ারম্যান থাকে তার সাথে আমি বিজিবির মাধ্যমে কথা বলেছি।’
ভায়রার নাম দেবেন্দ সাংমা বলে জানান ওসি। বিজিবির মাধ্যমে খবর দিয়ে দেবেন্দকে সীমান্তের কাছে ডাকিয়ে এনে সরাসরি কথা বলেছেন বলে জানান মো. শহীদুল্লাহ। লাস্টিং ভারতের নাগরিক বলে শতভাগ নিশ্চিত করেন তিনি।
গুলি কীভাবে লেগেছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এইটা জিজ্ঞেস করছিলাম। কিন্তু ওরা বলছে যে গুলি খায় নাই সে পাহাড়ে গাছে উঠতেছিল, তখন পড়ে গেছে। কীভাবে পড়েছে এটা আর বলতে পারে নাই। পিঠেই আঘাত বলে জানালেও গুলির কথা জানায়নি সে।’
বাড়ি ইন্ডিয়ায় তবে চালাকি করে বাংলাদেশের ভেতরের ঠিকানা দিয়েছে বলে জানান তাহিরপুর থানার ওসি।