পাহাড়ে মৎস্য চাষ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ

হ্রদ, পাহাড় আর পাহাড়ি ঝরনায় ঘেরা পার্বত্য তিন জেলায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যচাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’ (৩য় পর্যায়) চালু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। পুকুর আর জলাশয়ের স্বল্পতার কারণে পিছিয়ে থাকা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নই ছিলো এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
২০১২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে আগামী ২০১৭ সালের জুনে। প্রায় ৪৮ কোটি সরকারি টাকা ব্যয়ে তৈরি ৮২৮টি ক্রিক বা বাঁধের মাধ্যমে সৃষ্ট ৮৬৩ হেক্টর জলাশয়ে প্রতিবছর প্রায় ১৭০৬ মেট্টিন টন মাছ উৎপাদনের কথা ছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূরে থাক, এর ৭৫ শতাংশ জলাশয়ই এখন অপ্রয়োজনীয়,পরিত্যক্ত।
হ্রদ, পাহাড় আর পাহাড়ি ঝরনায় ঘেরা পার্বত্য তিন জেলায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যচাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’ (৩য় পর্যায়) চালু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। পুকুর আর জলাশয়ের স্বল্পতার কারণে পিছিয়ে থাকা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নই ছিল এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
২০১২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্প শেষ হচ্ছে আগামী ২০১৭ সালের জুনে। প্রায় ৪৮ কোটি সরকারি টাকা ব্যয়ে তৈরি ৮২৮টি ক্রিক বা বাঁধের মাধ্যমে সৃষ্ট ৮৬৩ হেক্টর জলাশয়ে প্রতিবছর প্রায় ১৭০৬ মেট্টিন টন মাছ উৎপাদনের কথা ছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূরে থাক, এর ৭৫ শতাংশ জলাশয়ই এখন অপ্রয়োজনীয়,পরিত্যক্ত।
গত ৩০ মার্চ রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই এ প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যচাষ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। যদিও প্রকল্পের অধিকাংশ কাজই বর্তমানে শেষ পর্যায়ে আছে। এর আগের দুই পর্যায়ে তেমন বড় কোনো কাজ না হলেও এবার তৃতীয় পর্যায়েই সবচেয়ে বেশি ক্রিক নির্মাণ করা হয়েছে।
ক্রিক নির্মাণের কাজ করেছেন, এমন একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘কাজ পেতে এমএলএসএস জামালকে ঘুষ,কাজ তদারকিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ঘুষ,কাজ তুলে আনতে তিন আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র কর্মীদের নির্ধারিত হারের চাঁদা দেওয়ার পর কাজের মান আর কী থাকে, সেটা তো আপনারাই বুঝতে পারছেন!’
প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে অন্তত দুটি ক্রিক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সৈকত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি টুকটাক ঠিকাদারি কাজ করি বিভিন্ন বিভাগে। কিন্তু এই প্রকল্পে মৎস্য উন্নয়নের নামে যে নজিরবিহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র দেখেছি তাতে আমি নিজেই হতাশ, ব্যথিত।’
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. হান্নান মিয়া বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। এসব প্রমাণহীন অভিযোগের তোয়াক্কা করি না আমি। যেখানে ইচ্ছা সেখানে বদলি করুক, কিছুই যায় আসে না তাতে। আমার মন্ত্রণালয় ঠিক থাকলেই হলো। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তারা আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছে, যা উদ্দেশ্যমূলক। আমি এক টাকাও দুর্নীতি করিনি, কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। আমি ঠিকাদারদের কাছ থেকেও কোনো টাকা নেইনি।’
এই প্রসঙ্গে হান্নান মিয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর ও এমএলএসএস জামাল বলেন, ‘আমি ট্রেজারির কাজের জন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ টাকা নিয়েছি, এটা সত্য। এর বাইরে অফিসের খরচের কথা বলে কোনো টাকা নেইনি।’
অন্যদিকে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, ‘মৎস্য বিভাগ জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত একটি বিভাগ, অথচ সে আমার কথাই শোনে না, আমার ফোনও ধরে না। তাঁর উদ্ধ্যত এবং সীমাহীন দুর্নীতি সম্পর্কে সংসদীয় কমিটির সভায় আমি বলেছি। শুধু আমি নই,পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী এবং খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরাও বলেছেন।’