বোয়ালমারীতে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত অর্ধশত, ভাঙচুর-লুটপাট

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বর্দী ইউনিয়নে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারটি গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়েছে। গতকাল রোববার জয়পাশা বাজারে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় চার পুলিশ সদসদ্যসহ উভয়পক্ষের আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন। ভাঙচুর করা হয়েছে পরমেশ্বর্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ ১৫টি দোকান। ব্যাপক লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।
খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩৯টি ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাতেই ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত এক প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আজ সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পরমেশ্বর্দী গ্রামের আদেল উদ্দিন আকন্দের ছেলে ফারুক আকন্দের (২৫) সঙ্গে পরমেশ্বর্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তমিজদ্দিন মোল্যার ভাতিজা কামালের (৩০) গত শনিবার জয়পাশায় অনুষ্ঠিত ক্রিকেট খেলা নিয়ে কথাকাটি হয়। এরই জের ধরে পরের দিন রোববার বিকেলে জয়পাশা বাজারে ফারুক ও তাঁর সঙ্গে সাথে থাকা চার-পাঁচজন কামালকে মারধর করে।
এ খবর কামালের গ্রাম ধুলজোড়াতে ছড়িয়ে পড়লে পরমেশ্বর্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তামারহাজী গ্রামের মুকুল মিনা, জয়পাশা গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রউফ ও ধুলজোড়া গ্রামের ছলেমান মেম্বরের নেতৃত্বে কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জয়পাশা বাজারে জড়ো হয়।
ফারুক আকন্দ এলাকায় এসে এ খবর দেয়। তখন পরমেশ্বর্দী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ময়েনদিয়া গ্রামের ছিদ্দিক মাতুব্বর ও পরমেশ্বর্দী গ্রামের হাফেজ আক্তারের নেতৃত্বে কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জয়পাশা বাজারে যায়।
এর পরই উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় জয়পাশা বাজারের নান্নু আলী, রুবেল, নান্নু শেখ, শিমুল, রাজকুমার, লুৎফর, ছিদ্দিক ও নজরুলের দোকানসহ ১৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
সংঘর্ষে ছিদ্দিক মাতুব্বরের পক্ষের গুরুতর আহত পরমেশ্বর্দী গ্রামের সাকু শেখ (৫০), মো. রফিক (৪৫), ময়েনদিয়া গ্রামের রাশেদ বিশ্বাস (২০), সুমন বিশ্বাস (১৮), ফারুক শেখ (২৭), সহিদ কাজী (৩০), আকরাম শেখ (৩৬) ও প্রতিপক্ষের মালিখালী গ্রামের নুর আলম (২৮), ফয়সাল (১৮), আমিনুর শেখ (৩৮), শহর আলী (২০), শফিক শেখ (৩৩), কালাম শেখ (২৭), জয়পাশা গ্রামের মাসুদ শেখ (২৬), খায়ের শেখ (৫০), লখাই চৌধুরী (৪২) ও ধুলজোড়া গ্রামের নজরুল শেখকে (৩০) বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সংঘর্ষে আহত বোয়ালমারী থানার কনস্টেবল জাকির হোসেন (৪৫), জহির আহমেদ (৩০), আবদুল হালিম (৫০) ও আবদুল আলীমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের ব্যাপারে মুকুল মিনা বলেন, রোববার বিকেলে জয়পাশা বাজারে ফারুক আকন্দ নৌকা প্রতীক নিয়ে কটূক্তি করলে কামাল প্রতিবাদ করে। এ সময় ফারুকের সঙ্গে থাকা লোকজন কামালকে মারধর করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত তাঁর গ্রামের লোকজন প্রতিবাদ করে। পরে ফারুকের পক্ষ নিয়ে মান্নান মাতুব্বর ও তাঁর ভাই ছিদ্দিক মাতুব্বর লোকজন নিয়ে জয়পাশা বাজারে লুটপাট চালায় এবং আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে।
এ সময় জয়পাশা, মালিখালি ও তামারহাজী গ্রামের লোকজনও অস্ত্র নিয়ে উপস্থিত হলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ছিদ্দিক মাতুব্বর বলেন, ফারুকের শালির সঙ্গে কামালের প্রেম করা নিয়ে তাদের মধ্যে ওই দিন জয়পাশা বাজারে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় আমার ভাই মান্নান মাতুব্বর পাশের ভাবখণ্ড গ্রামের ধীরেন নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ দেখে বাড়ি ফিরে আসার পথে জয়পাশা বাজারের সুবাস সাহার দোকানে আটকা পড়ে। এলাকায় এ খবর জানাজানি হলে তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নৌকা প্রতীক নিয়ে কটূক্তি করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বোয়ালমারী থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত শনিবার ক্রিকেট খেলা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে গতকাল রোববার কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।