ধানের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের দাবি কৃষকদের

নেত্রকোনায় বোরো আবাদের ধুম পড়েছে। কনকনে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে কৃষক ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন; হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জমি তৈরি, সার প্রয়োগ ও চারা রোপণ করছেন। তবে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তাই ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নেত্রকোনা জেলার চারটি হাওর উপজেলাসহ ১০টি উপজেলায় এক লাখ ৮০ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৯৭ হাজার ৭৭০ টন। এরই মধ্যে জেলার ৫০ ভাগ আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। গত আমন মৌসুমে পর পর দুই দফা বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই তীব্র শীত উপেক্ষা করে অধিক পরিমাণ জমিতে বোরো চাষাবাদে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষক। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা। ধান উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেলেও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। ধানের উৎপাদিত ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলায় এক লাখ ৮০ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, এক লাখ ৬৯ হাজার ১৯৩ হেক্টর জমিতে উফশী ও ৬৫১ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করা হবে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৯৭ হাজার ৭৭০ টন। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৬৮০ টন হাইব্রিড, ছয় লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৮ টন উফশী ও এক হাজার ৩০২ টন স্থানীয় জাতের ধান উৎপাদিত হবে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কনকনে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে কৃষকরা ভোরবেলাতেই জমিতে কাজে নেমে পড়ছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি চাষাবাদ ও বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘গত আমন মৌসুমে পর পর দুই দফা বন্যায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতেই আমরা তীব্র শীত উপেক্ষা করে অধিক পরিমাণ জমিতে বোরো চাষাবাদে ব্যস্ত রয়েছি।’
বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৫০ কাঠা জমিতে বোরো আবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে ২৮ কাঠা জমিতে ধান লাগাইছি।’
পূর্বধলার গরুয়াকান্দা গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া জানান, সার-ডিজেলসহ কৃষি উপকরণাদির মূল্যবৃদ্ধির ফলে একদিকে ধান উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল জানান, হাওর অঞ্চলে ৯০ ভাগসহ সারা জেলায় ৫০ ভাগ আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের ইরি-বোরো চাষাবাদে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার জেলার ১০ উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।