বিএনপির ২৩ জনের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ চেষ্টা’র মামলা

‘ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে’ এমন অভিযোগ এনে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভবাজার, পুরাতন বাস স্টেশন, কাঁঠালতলী ও কলেজ গেট এলাকার বিএনপির ২৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাঙামাটির কোতোয়ালি থানায় গত ২০ ডিসেম্বর মামলাটি করেন বরকল উপজেলার এক নারী।
তবে এই মামলাটিকে ‘নির্বাচনী মামলা’ অভিহিত করেছেন আসামিরা। তাঁরা বলছেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা থেকে বিরত রাখা ও কেন্দ্র দখল চেষ্টায় সম্ভাব্য বাধাদানকারীদের এলাকাছাড়া করতে এই মামলা করানো হয়েছে।
মামলা দায়েরের পরপরই এজাহারে উল্লেখ করা বিএনপির ওই ২৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, এমনটা জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ রশীদ।
মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন, ১৯ ডিসেম্বর বরকল থেকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য তাঁরা দুজন নৌযানে করে রাঙামাটিতে আসার পথে চেঙ্গীমুখে আরেকটি নৌযানে করে ২০-২৫ জন লোক তাঁদের গতিরোধ করে তুলে নিয়ে যান এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন। মো. ইকবাল, সুজন বড়ুয়া, আবু তৈয়ব ও মো. শফি নামের চার ব্যক্তি তাঁদের উদ্ধার করেন। পরে থানায় গিয়ে তিনি মামলা করেন।
মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন রাঙামাটি পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহফুজ উদ্দীন, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. মাসুম, বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান, যুবদল নেতা আবদুল মান্নান, মো. নেজাম, মো. ফজল, নূর নবী, মো. দিদার, আবদুস শুক্কুর, আবুল হাশেম, মদন, রাশেদ, নাজিমউদ্দীন, শাহ আলম, লিটন, ইলিয়াছ, ঝন্টু, আলমগীর, রাজু, আরজু, সাদ্দাম ও শামীম। তাঁরা সবাই বিএনপি, যুবদল বা ছাত্রদলের বিভিন্ন কমিটির দায়িত্বশীল নেতা এবং বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে এই রকম নোংরামি করে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে ভোট চুরির পাঁয়তারা করছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করে আওয়ামী লীগ যা করতে চাইছে তা রাঙামাটির মতো শান্তিপূর্ণ শহরের রাজনীতির পরিবেশকেই নষ্ট করবে।
রাঙামাটি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বাসেত অপু বলেন, ‘এটা একটা হাস্যকর, অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ। মূলত ভোট কারচুপিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন সব বিএনপি নেতা-কর্মীকে টার্গেট করেই আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারটি পড়লে এবং সাক্ষীদের নাম দেখলেই এই মামলার উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়। এসবের পরিণতি কারো জন্যই ভালো হবে না।’
তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, ‘এই মামলার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কিছু জানিও না। ওরা অপকর্ম করেছে, ভিকটিম মামলা করেছে। এতে আমাদের কীই বা করার আছে।’
কোতোয়ালি থানার ওসি মুহম্মদ রশীদ বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি, মামলা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
রাঙামাটি জেলা বিএনপির নিন্দা : এদিকে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ চেষ্টার’ মামলার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক দীপন তালুকদার দীপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পনির যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ মদদে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে রাঙামাটি শহরের চিহ্নিত কিছু ভোটকেন্দ্র বিএনপি নেতাকর্মী শূন্য করে দখল করার পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। এ রকম কল্পনাপ্রসূত কথিত ঘটনা সাজিয়ে যে মামলা করা হয়েছে তা কোনো তদন্ত ছাড়া কোতোয়ালি থানায় গ্রহণ করাটা উদ্বেগজনক।
বিএনপি নেতারা বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ করে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।