ভিসি নাসিরের ক্যাম্পাস ত্যাগ ‘প্রাথমিক বিজয়’, আন্দোলন চলছে

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে ১২ দিনে গড়াল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।
প্রতিদিনের মতো আজ সোমবারও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করে ভিসিবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। এ ছাড়া আন্দোলনের ১২তম দিনে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন, ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বৃক্ষরোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, গতকাল রোববার রাতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলো থেকে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন ভিসি নাসিরউদ্দিন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ভিসি নাসিরউদ্দিনকে অপসারণের সুপারিশ করে গতকাল রোববার ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এ প্রতিবেদনে ভিসির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন। ভিসির ক্যাম্পাস ত্যাগকে ‘প্রাথমিক বিজয়’ হিসেবেও দেখছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ভিসির অপসারণ বা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’—এ বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে অশোভন ভাষায় কথা বলেন উপাচার্য। তাঁদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়।
সেখানে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ফাজিল কোথাকার! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তুমি জানো না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন?’
উপাচার্য বলছিলেন, ‘আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলেমেয়ে।’
অডিও ফাঁসের পর জিনিয়াকে শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এরপর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়া। দুদিন বাদেই কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর রাতেই ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর গভীর রাতে একটি অফিস আদেশ আসে, যেখানে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই অফিস আদেশ আমলে না নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবার ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা আজও অব্যাহত আছে।