মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ সম্ভাব্য প্রার্থীদের

দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মনোনয়নের আশায় মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের আগেই তাঁরা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে নেতাদের মন জয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাঠপর্যায়ে জনসংযোগের পাশপাশি তাঁরা নিজ দলের উচ্চ পর্যায়ের ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন।
কেবল নির্বাচনী রাজনীতি নয়, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দলীয় রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ। মেয়র পদ দখলে নিতে সরব হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। অপর দিকে পদ দখলে রাখতে পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দলের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আবদুর শুকুর শেখ ছাড়া কারো নাম এখনো শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু ছয়জন মনোনয়ন প্রত্যাশী নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। তাই পৌর নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে পুরনো দ্বন্দ্ব ফিরে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য মো.আবদুর রহমানের ঘনিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.শাহজাহান মীরদাহ পিকুল মনোনয়ন দৌড়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেনের ভাই মো. মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়াও প্রভাবশালী প্রার্থী। দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বাবলু মিয়া এককভাবে লোকজন নিয়ে সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
পিকুল মীরদাহ অপর তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলিম মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টু ও মোশাররফ হোসেন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
এর বাইরে যুবলীগ নেতা মো. মনিরুজ্জামান মৃধা লিটন বড় আকারের মহড়ার মাধ্যমে আলোচনায় আসার চেষ্টা করেছেন। তিনি এককভাবে গণসংযোগসহ নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে পিকুল মীরদাহ ও বাবলু মিয়ার মধ্যে যে কোনো একজন মনোনয়ন পাবেন বলে নেতা-কর্মীরা মনে করেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলের একাধিক নেতা। এদিকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আবদুর রহমান রয়েছেন মানসিক চাপে। এ জন্য তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করছেন।
বোয়ালমারী পৌর নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জ।এর আগের দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে বিএনপির আবদুর শুকুর শেখ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে পৌর জামায়াতের আমীর সৈয়দ নিয়ামুল হাসান প্রার্থিতা ঘোষণা করে সভা সমাবেশ করে চলেছেন।
মেয়র আবদুর শুকুর শেখ বলেন, ‘কোনো প্রতীকে নির্বাচন হলো তা নিয়ে ভাবনা নেই। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো বলেই আশা করছি।’
অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৩৫ বছর আওয়ামী লীগে থাকা মো. শাহজাহান মীরদাহ পিকুল দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন,‘দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে রয়েছেন। মনোনয়ন পেলে সবাই আমার সঙ্গে নির্বাচনে নেমে পড়বেন এবং আমিই এই প্রথম মেয়র পদটি আওয়ামী লীগকে উপহার দিতে পারবে বলে আশা করছি।’
মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়া জানান, দলীয় মনোনয়ন তিনি একপ্রকার পেয়েই গেছেন। দলের সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁকে বিজয়ী করবেন বলে তিনিও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন মুসা মিয়া পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্তকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই। এতে দল শক্তিশালী হবে, নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন হবে। দলে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
সংসদ সদস্য আবদুর রহমান দলের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে বলেন, ‘একটি বড় দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনা করে আমরা প্রার্থী নির্বাচন করব। আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর পরামর্শ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে, প্রয়োজন তাদের সরাসরি ভোটে আমরা মেয়র ও কাউন্সিল প্রার্থী মনোনয়ন করব।’
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া আসন্ন পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমার দল এখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ফলে বোয়ালমারী পৌর নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার নির্দেশ কাউকে দেওয়া হয়নি। তবে বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পেলেই আমরা দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামব।’