স্থানীয় নির্বাচনে আগে থেকেই দলীয় সমর্থন ছিল : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে থেকেই দলীয় সমর্থনে হচ্ছে, এখন আইনের মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিকতা দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সিইসি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় সমর্থনে হচ্ছে। তখন শুধু নির্দলীয় প্রতীক ছিল। পত্রপত্রিকায়ও প্রার্থীকে অমুক দলের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করে দেওয়া হয়। আমরা শুধু নির্বাচনের সময় নির্দলীয় প্রতীক দিয়ে থাকি। আগে থেকেই নির্বাচনের সব কর্মকাণ্ড দলীয় পরিচয়ে হচ্ছে।’
গত ১২ অক্টোবর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। পৌরসভা নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসায় এবং এ সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ অধিবেশন না থাকায় এ আইনের খসড়াটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন পাঁচটি আলাদা আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পৌরসভা ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
বিষয়টির উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন এখনো হয়নি। এই অধ্যাদেশের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আমাদের দেখতে হবে আইনে কী আছে, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে আমাদের হাতে সময় কম। তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যাতে অধ্যাদেশ হাতে পেলে নির্বাচনী বিধি সংশোধন করতে পারি।’
সংসদ নির্বাচনের মতো এখন থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। নির্বাচন কমিশন ওই রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের ওই রাজনৈতিক দলের প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারবেন। কেউ চাইলে এর বাইরেও স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে পারবেন বলে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন দেওয়া প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে কোনো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনের সময় খুব কম। নতুন করে কোনো দলকে নিবন্ধন দিতে হলে পর্যাপ্ত সময় দরকার। তবে আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করি। সে সময় আমাদের হাতে নেই। সামনে যে নির্বাচনগুলো আছে এ সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের যাচাই-বাছাই করা যাবে না। এ জন্য নতুন কোনো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। দলীয় পরিচয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারলেও সংসদ নির্বাচনের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যে কেউ অংশ নিতে পারবে। এ বিধান আমরা স্থানীয় নির্বাচনে রাখছি।’
স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরো জোরদার হবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমে আসবে বলে মত দিয়েছেন সরকারি দলের নেতারা। অপরদিকে এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হানাহানি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।
দলীয়ভাবে নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কার ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যাদের নির্বাচনে পুলিশও দরকার হয় না। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশেও একদিন এমন সংস্কৃতি আসবে, যখন নির্বাচনে সহিংসতা থাকবে না। নির্বাচনে সহিংসতা ঠেকানোর জন্য আমরা বেশি করে আইনশৃঙ্খলা মোতায়েন করার চেষ্টা করব।’
পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের অধ্যাদেশ হাতে পেলে আমরা পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করব। সে হিসেবে ১৫ নভেম্বরের দিকে অধ্যাদেশ পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলীয়ভবে নির্বাচন করা সম্ভব।’
আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা মৃত ভোটার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নারী ভোটারের তথ্য নেওয়ার জন্য প্রতিনিধিদের সহায়তা নিয়ে থাকি। এ জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আজকে তাদের কাছে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে সহযোগিতা চাইলাম। তারা দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মৃত ভোটারের সঠিক তালিকা ইসিতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
পর্যায়ক্রমে ঢাকা দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও নির্বাচন কমিশন বৈঠক করবে বলে জানান সিইসি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে স্মার্টকার্ড বিতরণকে সামনে রেখে জন্মসনদে যাতে প্রকৃত বয়স উল্লেখ করা হয় তার নিশ্চয়তা বিধান, অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে ১৮ বছর দেখিয়ে জন্মসদন সংগ্রহ করতে না পারে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মৃত ভোটারের নাম কর্তন, শ্মশান ও গোরস্থানে রক্ষিত রেজিস্টারে মৃতদের তালিকা সংগ্রহ করা এবং নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রদান করা প্রভৃতি বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চেয়েছে কমিশন।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ, ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকসহ কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।