তরুণদের মাঠে আনতে বৃদ্ধদের ফুটবল

ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণকারী দুই দলের সব খেলোয়াড়ের বয়স ৬০ বছরের বেশি। জীবনে শেষ কবে বলে লাথি দিয়েছেন তাও তাঁদের মনে নেই। এঁদের মধ্যে ৮০ বছর ছুঁই ছুঁই বা এর আশপাশের বয়সেরও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন।urgentPhoto
সেই প্রবীণদের শ্রদ্ধা জানাতে এবং খেলার মাঠে তরুণদের ফিরিয়ে আনতে আয়োজন করা হয় ফুটবল প্রতিযোগিতার। খেলাটি হয় গত রোববার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ মকসুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বয়সের কারণে খেলার ধরন কিছুটা এলোমেলো হলেও বার্ধক্যকে জয় করে পুরো একটি ঘণ্টা মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দুই দলের ষাটোর্ধ্ব খেলোয়াড়রা। এই বয়সেও খেলার মেজাজে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো ঘাটতি ছিল না তাঁদের মধ্যে। শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত সর্বস্ব উজাড় করে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ এমনই ছিল যে, ফাউলের কারণে রেফারি নুরুল ইসলামকে বাঁশি বাজাতে হয়েছে ২০ বারের ওপর। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় কালো দল ৩-১ গোলের ব্যবধানে সাদা দলকে পরাজিত করে জয়লাভ করে। প্রথমার্ধে সুরুজ মিয়ার গোলে সাদা দল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে কালো দলের আবদুল আলী দুটি ও আবদুল কাদের এক গোল করে নিজ দলের জয় নিশ্চিত করেন।
ব্যতিক্রমী এ খেলা উপভোগ করেন মাঠে উপস্থিত হওয়া কয়েক হাজার দর্শক। বিশেষ করে নারী দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দর্শকদের একটি বড় অংশই ছিল খেলোয়াড়দের ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী-পুত্রবধূ ও নাতি-পুতিরা। খেলা চলার পুরোটা সময় তাঁরা চিৎকার করে উৎসাহ জুগিয়েছেন খেলোয়াড়দের।
স্থানীয় প্রভাতি সংসদ ব্যতিক্রমী এ ফুটবল খেলার আয়োজন করে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে কালো দলের আয়ুব আলীই সবচেয়ে প্রবীণ। তাঁর বয়স ৮৬ বছর। একই দলের তোতা মিয়ার বয়স ৮৩, আবদুল খালেকের ৮০ ও আবদুল আহাদের ৭৭ বছর বয়স। সাদা দলের মনসুর আলীর বয়স ৮২, নাসির উদ্দিনের ৭৬ ও গিয়াস উদ্দিনের ৭০ বছর বয়স।
এ খেলার উদ্যোক্তা প্রভাতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল এ ধরনের একটি আয়োজনের মাধ্যমে প্রবীণদের সম্মানিত করা। পাশাপাশি তরুণদের খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করা।
খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন এলাকার প্রবীণতম ব্যক্তি কারি শামসুদ্দিন আহমেদ। প্রভাতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জেলা বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় লতিবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক, আক্কাস আলী মেম্বারসহ অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
খেলাশেষে কালো দলের অধিনায়কত্ব করা এককালের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও জিএস পারভেজ মোস্তফা কামালের আবেগপূর্ণ বক্তৃতা সবার হৃদয়কে আলোড়িত করে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৩০ বছর পর আজ মাঠে নেমে যে আনন্দ পেয়েছি তা বলে বোঝানোর মতো না। হয়তো আমি এবং আরো অনেকেই বাকি জীবনে এ ধরনের সুযোগ নাও পেতে পারি। তাই সুযোগ পেলে আপনারা আবার মাঠে নামুন।’