নেত্রকোনায় নানা কর্মসূচিতে হানাদারমুক্ত দিবস পালন

নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
সকালে জেলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য প্রজন্ম শপথ ও সাতপাই স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী প্রমুখ। পরে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এরপর পাবলিক হলে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত নেত্রকোনা জেলার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। রণাঙ্গনে এখানকার প্রায় তিন হাজার মানুষ সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা অর্জনে প্রাণ দিতে হয় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় এক হাজার সাধারণ মানুষকে। একাত্তরের ২৯ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা নেত্রকোনায় প্রবেশ করেই মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্থানীয় দালালদের নিয়ে হত্যাযজ্ঞের নীল নকশা তৈরি করে। এরপর পর্যায়ক্রমে পাকিস্তানি সেনারা নেত্রকোনার ত্রিমোহনী ব্রিজ, মোক্তারপাড়া ব্রিজ ও চন্দ্রনাথ স্কুলের পাশে নদীর তীর, চল্লিশা রেল ব্রিজ, পূর্বধলার পুকুরিয়াকান্দার ধলাই নদীর তীর, কেন্দুয়া, জারিয়া রেল স্টেশনের কাছের কংস নদের তীর, দুর্গাপুরের বিরিশিরিসহ অন্তত ১৫টি স্থানে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। হত্যা করা হয় ডাক্তার মিহির সেন, হেম বাগচী, শিল্পী সিদ্ধার্থ সেন, আইনজীবী অখিল সেন, শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তী, এম এ আওয়াল, রফিকুল ইসলাম, সুরুজ আলী, অধ্যাপক আরজ আলী, কৃতী ফুটবলার বদিউজ্জামান মুক্তাকে।
নেত্রকোনাকে মুক্ত করার লক্ষে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর তিন দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা কৃষিফার্ম এলাকায় অ্যাম্বুশ পেতে হানাদারদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় সরাসরি যুদ্ধে শহীদ হন আব্দুল জব্বার, আব্দুর রশিদ ও আব্দুর সাত্তার। এই যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হন। অবশেষে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। হানাদারমুক্ত হয় নেত্রকোনা।