ওদের জন্য ‘খোলা আকাশ’ বিদ্যালয়

প্রায় একযুগ ধরে ঝালকাঠিতে বসবাস তাদের। যাযাবর জীবনযাপন করা মানতা সম্প্রদায়ের এই মানুষগুলোর নেই কোনো অক্ষরজ্ঞান। কারণ কোনো স্কুল-কলেজে গিয়ে বিদ্যার্জনের সুযোগ মেলে না তাদের।
তবে এবার নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখার সুযোগ এসেছে তাদের কাছে। এখন থেকে তারাও বই হাতে যাবে স্কুলে, শিখবে লেখাপড়া। তবে সেটা কোনো ইট-কাঠ পাথরে নির্মিত উঁচু দালানের মতো স্কুলে গিয়ে নয়। ভাসমান জীবন বয়ে চলা এসব মানুষের জন্য চালু করা হয়েছে ‘খোলা আকাশ’ বিদ্যালয়। সেখানেই নিরক্ষরতার অন্ধকার ঘোচাতে পড়তে যাবেন মানতা সম্প্রদায়ের শিশু ও বয়স্ক নারী-পুরুষ।
মানতা সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই ‘খোলা আকাশ’ নামের একটি ব্যতিক্রমী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন ঝালকাঠি জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু আক্তার নদী। আজ সোমবার সকালে শহরের কলেজ মোড় এলাকার একটি মাঠে স্কুলটির উদ্বোধন করেন তিনি নিজেই।
উদ্বোধনের পর স্কুলটিতে মানতা সম্প্রদায়ের ৮০ জন শিশু এবং বয়স্ক নারী-পুরুষকে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের মধ্যে বই, খাতা ও কলম বিতরণ করা হয়।
নতুন বই হাতে পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে মানতা সম্প্রদায়ের শিশুরা। কেউ কেউ তো বই হাতে পেয়েই মাঠে বিছানো মাদুরে বসে পড়তে শুরু করে দিয়েছে। খুশির ছাপ দেখা গেছে সম্প্রদায়ের বয়স্ক নারী-পুরুষের মুখেও। জীবনের অর্ধেকটা সময় পার করে দেওয়া এসব মানুষও লেখাপড়া শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মানতা সম্প্রদায়ের সর্দার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা প্রায় একযুগ ধরে ঝালকাঠিতে বসবাস করছেন। কিন্তু তাঁদের কোনো শিক্ষা নেই। সন্তানরা লেখাপড়া জানে না। আজ থেকে নতুন স্কুল চালু হওয়ায় তাঁরা খুশি। তাঁদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারবে। সেই সঙ্গে তাঁরাও লেখাপড়া শিখতে পারবেন।
এমন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে কারণ জানতে চাইলে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু আক্তার নদী বলেন, “আমি তাঁদের শিক্ষার আওতায় আনতে চাইছি। এরা যাযাবর, এদের শিক্ষার অভাব রয়েছে। এরা স্কুলে ভর্তি হতে চায়, তাদের কোনো স্কুল ভর্তি করছে না। এ জন্য আমি এদের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা এখানে করছি। ‘খোলা আকাশ’ স্কুল নামে এটা শুরু করা হলো।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা, অনুযায়ী এ দেশে কেউ নিরক্ষর থাকবে না। এ জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া বলে জানান যুব মহিলা লীগের এই নেত্রী।