ঈদে ভিজিএফের চাল পাচ্ছে না ৮৮ লাখ পরিবার

ফজলুল হক মৃধা চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর বাকিলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাধাসার গ্রামের হতদরিদ্র বাসিন্দা। সরকারের ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির আওতায় প্রতি ঈদে তিনি ২০ কেজি চাল বিনামূল্যে পেতেন। কিন্তু এবার পাচ্ছেন না। কারণ খাদ্যের মজুদে সংকট দেখা দেওয়ায় এবার ঈদে ভিজিএফ কর্মসূচি স্থগিত করেছে সরকার।
ফজলুল হক মৃধার পরিবারের মতোই ভিজিএফ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি ঈদে কার্ডধারী প্রায় ৮৮ লাখ পরিবারকে বিনামূল্যে ২০ কেজি করে চাল দিয়ে আসছিল সরকার। খাদ্য মজুদে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় এবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
হতদরিদ্র ফজলুল হক মৃধার চাল না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ হোসেন পাটোয়ারী এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁর ইউনিয়নে ৮৪০টি পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রতি ঈদে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। কিন্তু এবার কোনো চাল পাননি তাঁরা।
নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার ৮ নং ইউপি চেয়ারম্যান বাকের হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতি ঈদে ৫১০টি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দেওয়া হতো। এবার আমরা এখনো কোনো চাল পাইনি। ফলে প্রতিদিনই ভিজিএফ কার্ডধারীরা এসে আমার কাছে ভিড় করে। তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
ভিজিএফ কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘খাদ্য পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিজিএফ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। সরকার আবার যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখন এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।’
ভিজিএফ কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এবার আমরা অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যা ও উত্তরাঞ্চলে ব্লাস্ট রোগের মাধ্যমে ধান চিটা হয়ে যাওয়ায় বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ফলে দেশীয় বাজার থেকে বোরো সংগ্রহ করে মজুদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে ১৫ মেট্রিক টনের স্থলে আড়াই লাখ টনও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।’
মজুদ ঠিক রাখতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
খাদ্য অধিদ্প্তরের আরেক কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন খাদ্যগুদামে সব সময়ের জন্য ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল সব সময় মজুদ রাখা হতো। এবার এখন মজুদের পরিমাণ কমে আড়াই লাখ টনে নেমে এসেছে।’
এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এখন দরপত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানি করে মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভিজিএফ কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা শুধু এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করি। চাল সরবরাহ করে থাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এখন খাদ্য মন্ত্রণালয় আপাতত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় চাল সরবরাহে অপারগতা জানিয়েছে। ফলে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
মোহাম্মদ হোসেন আরো বলেন, এ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হলেও খাদ্য মজুদ যখন বাড়বে, সরকার আবার এ কর্মসূচি চালু করতে পারে।