‘আমি চাইছি ওগো ফাঁসি হোক, ওগো ফাঁসি হয় নাই’

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র শিশু রমজান শিকদারকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে একদল দুর্বৃত্ত। সেই মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে অপহরণকারীরা।
প্রায় চার বছর পর এই অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আজ বুধবার তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই রায়ে খুশি নন রমজানের মা মর্জিনা বেগম। রায়ে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আদালত থেকে বেরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মর্জিনা বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট হই নাই। আমার এত ছোট বাচ্চাটারে নিয়া ওরা এত কষ্ট কইরা মারল। আমি চাইছি, ওগো ফাঁসি হোক। ওগো ফাঁসি হয় নাই।’
এর পর আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন মর্জিনা।
আজ দুপুরে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মিয়াজী শহীদুল আলম চৌধুরী এই আদেশ দেন। এ সময় আদালতে আসামিরা উপস্থিত ছিলেন।
আদেশে তিন আসামির প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রমজানের লাশ গুমের অভিযোগে প্রত্যেক আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন—শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার ধামনা ধনকুশা গ্রামের হামিদুল হক, তাঁর বোন আফরোজা ও ফুফাতো ভাই নকলা রামাইসা গ্রামের মো. রিপন।
রমজান শিকদার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার মৃত ইসমাইল শিকদারের ছেলে। সে জালকুড়ি পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
মামলা নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রমজান শিকদারকে তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া হামিদুল হক, রিপন ও আফরোজা কৌশলে অপহরণ করেন। এর পর রমজানকে শেরপুর জেলার নখলা এলাকায় নিয়ে যান তাঁরা।
পরে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে রমজান শিকদারের বাবা ইসমাইল হোসেনের কাছে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ায় তাঁরা রমজানকে গলা টিপে হত্যার পর লাশ লাশ গুম করে ফেলে।
এ ঘটনায় শিশু রমজান শিকদারের মা বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করে এবং তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চাপাঝুড়ি সেতু এলাকা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে ২৪ জনকে সাক্ষী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। শুনানি ও সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আজ ঘটনার প্রায় চার বছর পর সাজা পেল অপরাধীরা।