‘শোলাকিয়ার ইমামকে হত্যার জন্যই জঙ্গি হামলা’

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ মাঠের পাশে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী।
ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলার ছক কষা হয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন নব্য জেএমবির সংগঠক বলে পরিচিত এই রাজীব গান্ধী।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. ইকবাল মাহমুদের খাস কামরায় রাজীব গান্ধীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মুর্শেদ জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৯ মে শোলাকিয়া মাঠে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রাজীব গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড দেন আদালত। রিমান্ড শেষে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাজীব গান্ধীকে আদালতে নেওয়া হয়।
ওসি (তদন্ত) মো. মুর্শেদ জামান জানান, আদালতে রাজীব গান্ধী গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়া হামলার পরিকল্পনা, অস্ত্র সরবরাহকারী এবং অর্থের উৎসের বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে পুনরায় তাঁকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত ও তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাস ওরফে জাহিদ তাঁর জবানবন্দিতে শোলাকিয়া হামলা ও জঙ্গি-সংক্রান্ত বিষয়ে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে হামলার ছক কষা হয়েছিল।
এ হামলার জন্য গুলশান হামলার পর পরই তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে মেজর জাহিদ, নব্য জেএমবির ঢাকা বিভাগের অপারেশন কমান্ডার আকাশ, শোলাকিয়া হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুই জঙ্গি আবির রহমান ও শফিউল—এই পাঁচজনের দলটি কিশোরগঞ্জে অবস্থান নেয়। তাঁদের মধ্যে শফিউল জঙ্গি রাজীব গান্ধীর মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে আসে।
এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি শোলাকিয়া মাঠে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিশোরগঞ্জের আদালতে আবেদন জানানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুর্শেদ জামান এই আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলাসহ সারা দেশে পরিচালিত ২৩টি জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি হিসেবে রাজীব গান্ধী ঢাকায় কারাগারে আটক ছিলেন। রাজীব গান্ধীর বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের ভুতমারা গ্রামে।
গত বছরের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে পুলিশ সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় পুলিশের দুই সদস্য, এক জঙ্গি ও বাড়ির ভেতরে থাকা এক গৃহবধূসহ চারজন নিহত হয় এবং আট পুলিশসহ তিন পথচারী গুরুতর আহত হন।
হামলার তিন দিন পর ১০ জুলাই দুজনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করা হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছয়টি ধারায় করা মামলায় অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পাকুন্দিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সামছুদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এজাহারভুক্ত দুই আসামির মধ্যে শফিউল ইসলাম গত বছরের ৫ আগস্ট ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। বর্তমানে ওই মামলায় আসামি হিসেবে ঘটনাস্থলে আটক জঙ্গি জাহিদুল হক ওরফে তানিম ও জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জ কারাগারে রয়েছেন।