নান্দাইলে প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে আ. লীগের অবাঞ্ছিত ঘোষণা

পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে প্রথম আলোর স্থানীয় সাংবাদিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে উপজেলায় পত্রিকাটির বিক্রি নিষিদ্ধ, প্রতিনিধির কার্ড বাতিল ও চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবিও জানানো হয়েছে।
গত শনিবার নান্দাইল পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলো। এই সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। সে সময় প্রথম আলো পত্রিকায় আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিনের মধ্যে প্রথম আলোর নান্দাইল প্রতিনিধি রমেশ কুমার পার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আরো কঠোর কর্মসূচির হুমকিও দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
সমাবেশে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম শাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিমুল্লাহ লিটন, প্রচার সম্পাদক জামাল আকন্দ।
এদিকে আওয়ামী লীগের লীগ নেতারা হুমকি দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানিয়েছেন রমেশ কুমার পার্থ।
রমেশ কুমার পার্থ জানান, গত ১৮ মে দৈনিক প্রথম আলোতে ‘আওয়ামী লীগের দুপক্ষের পৃথক সমাবেশ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে নান্দাইল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া তাঁকে টেলিফোনে গালিগালাজ করেন ও হুমকি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন নান্দাইল থানায় একটি জিডি করেন তিনি।
পার্থ আরো বলেন, সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ নেতা তাঁকে শুধু অবাঞ্ছিতই ঘোষণা করেননি, সেই সঙ্গে তাঁর কার্ড বাতিল, চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবি এবং প্রথম আলোর পত্রিকায় অগ্নিসংযোগও করেছেন। এখন গোপনে প্রথম আলো বিলি করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে নিজে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান।
এ সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত ১৭ মে বিকেল ৪টায় নান্দাইল চৌরাস্তায় চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন নান্দাইল উপজেলার কোথাও আওয়ামী লীগের আর কোনো সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপরও দৈনিক প্রথম আলোতে পরদিন ‘নান্দাইল আ.লীগের দুপক্ষের পৃথক সমাবেশ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিতর্কিত এই সংবাদের মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে টেলিফোনে প্রথম আলোর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে বলেও জানান।
এ ঘটনায় ওই সাংবাদিক তাঁর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম জানান, বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশ করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায় তিনিও ওই সাংবাদিকের নামে জিডি করেছেন। তিনি কোনো হুমকি দেননি বলেও দাবি করেন।
নান্দাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সেই সমাবেশে আমিও ছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতারা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে প্রথম আলোর সাংবাদিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে উপজেলায় পত্রিকাটির বিক্রি নিষিদ্ধ, প্রতিনিধির কার্ড বাতিল ও চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন।’