নৌপথে অস্ত্র আনার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের : র্যাব

নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামিম অংশের সদস্যরা বিদেশ থেকে নৌপথে দেশে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা গেছে। এ কারণে তারা জাহাজে নিজেদের লোক রাখার চেষ্টা করছিলেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে গণমাধ্যমের সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার একটি বাড়িতে র্যাব-৪ অভিযান চালায়। এ সময় সারোয়ার-তামিম গ্রুপের প্রধান আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। ওই অভিযানে সারোয়ারের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার রুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আরো বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থেকে বিস্তারিত তথ্য থেকে ও অনুসন্ধান করে জানা যায়, তামিম চৌধুরীর আস্থাভাজন এক ব্যক্তি রয়েছেন। যিনি হলি আর্টিজান হামলার কয়েক বছর আগ থেকেই নিহত তামিম চৌধুরীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ওই ব্যক্তি তামিম দ্বারী ওরফে আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল্লাহ আল জাফরী ওরফে আমির হামজা ওরফে আল হুজাইফা নামেও পরিচিত।
মাহমুদ খান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, তামিম দ্বারী কয়েকজন জঙ্গি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে দেশের মধ্যে অবস্থান করছেন। তাঁরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনাও করেছেন। দলকে পুনরায় সংগঠিত করে জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর জন্য রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে তামিম দ্বারীকে ধরতে তৎপরতা শুরু করে র্যাব-৪। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে সাভারে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে তামিম দ্বারীকে (৩২) দুই সহযোগীসহ আটক করা হয়। আটক অন্যরা হলেন কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরুদ্দিন (২৬) ও মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছে থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, প্রায় এক কেজি বিস্ফোরকসহ আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরির সরঞ্জামাদি, তিনটি ছুরি, একটি চাপাতি, দুটি ল্যাপটপসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
গৌরাঙ্গ মণ্ডল থেকে তামিম দ্বারী
মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তার তামিম দ্বারী একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। তাঁর আগের নাম গৌরাঙ্গ কুমার মণ্ডল। তিনি ২০০৩ সালে এইচএসসি অধ্যয়ন করার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে তিনি মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হন। মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনার পর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলীসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই জাহাজে কর্মরত আবু বক্করের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং তামিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া অপর জঙ্গি মোস্তফা মজুমদার কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানিতে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনে এসে তামিম দ্বারী ও ডা. ইকবাল নামের একজনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। এরপর তিনি তামিম দ্বারীর কথামতো জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে হিজরতের উদ্দেশে বাড়ি ত্যাগ করেন। আর কামরুল হাসান ওরফে নুরউদ্দিনের বাবা বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) হাবিলদার ছিলেন। তিনি বিদ্রোহের অভিযোগে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন। ২০০৬ সালে কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নের সময় জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হন। ২০১৪ সালে তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মাধ্যমে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি হিজরতের জন্য বাড়ি ত্যাগ করেন।
মুফতি মাহমুদ আরো বলেন, এই তামিম দ্বারী বিদেশ থেকে নৌপথে অস্ত্র-গোলাবারুদ আনার জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।