পালিয়েছে কোচ দম্পতির নির্যাতনকারীরা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোচ দম্পতির মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানোর ঘটনায় দায়ীরা পুলিশের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
একই সঙ্গে ওই গ্রামে বসবাসকারী কোচ সম্প্রদায়ের পুরুষরাও গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি থাকছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়রানির শিকার হতে পারেন তাঁরা। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলো এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তাঁরা কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন, যার সরাসরি প্রভার পড়ছে তাঁদের জীবনধারণে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠনের নেতারা বলছেন, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন নতুন করে আরেকটি ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনা না ঘটে।
ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লুইচ জেংচাম এনটিভি অনলাইনকে গতকাল বুধবার রাতে বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা অবশ্যই খারাপ, অনেক বেশি করে ফেলেছে। মামলার পর থেকেই কোচ সম্প্রদায়ের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশের ভয়ে কাজ করতে পারছেন না অন্যরাও। তাদের পরিবার-পরিজন এখন না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। তাদের পরিবার কীভাবে চলছে, তা কিন্তু আপনারা দেখছেন না। তাতে দম্পতিকে নির্যাতনের চেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে অধিকাংশ আদিবাসী পরিবারের।’
ফুলবাড়ীয়ার হাতিলেট গ্রামে কোচ ও গারো সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করেন। তার অর্ধেক কোচ সম্প্রদায়ের লোক। হাতিলেট গ্রামে বসবাসকারী কোচদের আর্থিক অবস্থা কারোরই ভালো নয়। ৯৫ ভাগ পেশায় দিনমজুর বা কৃষিশ্রমিক। পাঁচ ভাগ কিছু জমিজমার মালিক বা অবস্থা একটু ভালো।
লুইচ জেংচাম বলেন, ‘দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত। নিজেদের মধ্যেও তেমনি। কাজেই বিষয়টি নিয়ে যাতে আরো বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সেই অনুরোধ করছি। প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছি না, যাতে অন্য পরিবার ও অধিকাংশ আদিবাসীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়।’
ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব বলেন, এ মামলার আসামিদের ধরতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।
শুধু প্রতিবেশী অন্য ধর্মের এক ব্যক্তির সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের কারণে মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা দিয়ে গ্রামে ঘোরানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ওই কোচ দম্পতি। নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনকে খাওয়ানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওই দম্পতিকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
ঘটনার দুদিন পর ওই কোচ দম্পতি থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিরা প্রায় সবাই কোচ সম্প্রদায়ের মাতবরস্থানীয় ব্যক্তি। এর মধ্যে মামলা দায়েরের পর পুলিশ দুঃখীরাম বর্মণ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।