‘বন্ধুর বাড়ি গেছি, তাই চুল কাইট্যা দিছে’

শুধু প্রতিবেশী অন্য ধর্মের এক ব্যক্তির সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের কারণে মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা দিয়ে গ্রামে ঘুরানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের কোচ দম্পতি।
হাতিলেট গ্রামের নির্যাতিত গৃহবধূ লক্ষ্মী রানী বর্মণ গতকাল বিকেলে ফুলবাড়ীয়া থানায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা বন্ধু পাতছি দেখে যাওয়া-আসা করি। সেখানে মানুষে প্রতিবাদ করে। পরে আমরা দুপুরে গেছিলাম, হেগো বাড়িত থেকে আইয়া আমরা খাওয়া-দাওয়া কইরা রাইতে শুইছি। হেরা মারপিট করে চুল-টুল কাইট্যা দিছে।’
‘আংগরে আইন্যা মারপিট করল, মারপিট কইরা চুল কাইট্যা দিল, চুল কাইট্যা মাফ চাওয়াইলো, পরে জরিমানা দিল ৪০ আজার (হাজার) ট্যাহা (টাকা)। মাফ চাওয়াইছে, মাফ চাওয়াইয়া জুতার মালা গলায় দেওয়াইছে, মাইরধর করছে। হ্যারে (স্বামী) মারছে পোলা মানুষ, আমারে মাইয়া মানুষে। পরে আংগরে কেউ ফেরাই নাইক্যা।’
হাতিলেট গ্রামের কোচ সম্প্রদায়ের লক্ষ্মী রানী যখন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন তাঁর স্বামী কয়েস বর্মণও পাশে ছিলেন। সম্প্রদায়ের লোকজন লক্ষ্মী রানীর বিরুদ্ধে প্রতিবেশী এক মুসলিম অটোরিকশাচালকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ এনে সালিশ করে এ নির্যাতন করে। কিন্তু কয়েস তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
কয়েস কোচ বলেন, ‘ইবিরের (অটোরিকশাচালক) লগে আমরা ইস্টি করছি, হেই ইস্টির লাইগাই এই চাপ সৃষ্টি করছে। অর সাথে চলবার না করে। ওই মুসলমান তাই। আংগো দুইজনরে মারলো, অরে (স্ত্রী) মারলো মহিলারা, আমারে মারলো পুরুষরা। লাত্থি, ঘুষি দিয়ে কইলো চুল দেও কাইট্যা। চুল কাইট্যা বলে গরুর চোনা, পায়খানা খাওয়ানো অইবো। তার পরের দিন জুতার মালা দিলো, মাফ চাওয়াইলো। ট্যাহা চাইলো ৫০ আজার (হাজার)।’
কয়েস কোচ বলেন, ‘ইবিররে বেয়াই ডাকি, এইডাই সম্পর্ক। মাইনষে ভাওতা কইয়া মিছারে হাছা বানাইছে। এর বিচার চাই।’
ওই দিন সালিশ বৈঠকে কোচ সম্প্রদায়ের নবীন চন্দ্র বর্মণ, কালিমোহন বর্মণ, নরেন্দ্র বর্মণ, চন্দন বর্মণ, কৃষ্ণ মোহন বর্মণ, রসিক বর্মণ, সুধীর বর্মণ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ওই দম্পতি।
ঘটনার দুদিন পর গতকাল রোববার বিকেল বেলায় পুলিশ উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেট গ্রাম থেকে ওই দম্পতিকে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাঁরা মামলা করেন।
মামলায় নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত চার নারীসহ ১২ জন এবং অজ্ঞাত আরো তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন, ‘মামলা হয়েছে, এখন আমরা ব্যবস্থা নেব। যদিও আগে থেকেই সালিশে উপস্থিত নির্যাতনকারীদের ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। এরই মধ্যে দুঃখীরাম কোচ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’