নেত্রকোনায় ফসল রক্ষাবাঁধে ভাঙন, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

নেত্রকোনায় মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টাসহ কয়েকটি উপজেলায় পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া জেলার মোহনগঞ্জে চরহাইজদা ও খালিয়াজুরির হাওরাঞ্চলে ও হাওরের বিভিন্ন ফসল রক্ষাবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে।
নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টাসহ কয়েকটি উপজেলার বছরের একমাত্র ফসল বোরো। ফসল রক্ষার জন্য সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে নামমাত্র কাজ হয়ে থাকে।
বছরের একমাত্র ফসল আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সামনের দিনগুলো নিয়ে আশঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা। ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পানিতে ডুবন্ত ধান সংগ্রহ করছেন চাষিরা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অতিরিক্ত পানির কারণে দুদিনে খালিয়াজুরী সদরের চুনাই বাঁধ, গাজীপুর ইউনিয়নের ধৈলং বাঁধ, মাকলাইন বাঁধ, হরিপুর বাঁধ, নালুয়ার বাঁধ, মেন্দিপুর ইউনিয়নের আশাখালী বাঁধ, নাওটানা স্লুইস গেট বাঁধ, চাকুয়া ইউনিয়নের গঙ্গাবদর বাঁধ ভেঙে সংশ্লিষ্ট হাওরের সহস্রাধিক একর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া মোহনগঞ্জের চরহাইজদা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানিপ্রবাহ বাড়লে উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো তিন-চারদিনের মধ্যে মেরামত না হলে খালিয়াজুরীর প্রায় ৫০ হাজার একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যাবে।
ওই সমস্ত বাঁধের কয়েকটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাটি ভরাটের মাধ্যমে সংস্কার প্রকল্প কাজ হাতে নিলেও কয়েকটি বাঁধ প্রকল্পের আওতায় নেয়নি। আর যে প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে সেখানে লুটপাট চলছে।
নেত্রকোনা জেলা পরিষদের সদস্য ও খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম আবু ইছহাক জানান, এ উপজেলায় পাউবো এ বছর বাঁধ সংস্কারের জন্য বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ টাকাও খরচ করেনি। এলাকাবাসীর নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁধগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।
খালিয়াজুরি কৃষক লীগের সভাপতি তপন বাঙ্গালী ও সিপিবির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহন দেব রায় জানান, পাউবো বরাদ্দের শতভাগ কাজ নিয়ম অনুযায়ী ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে শুরু ও ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করত, তাহলে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল আজ হুমকির মধ্যে পড়ত না।
খালিয়াজুরির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, এ উপজেলায় পাউবো কোথায় কত টাকার কাজ কীভাবে করছে তিনি জানেন না।
তদারকির জন্য নেত্রকোনা পাউবোর কাছে তথ্য চাইলেও তারা দেয়নি।
বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের বলেন, হাওরবেষ্টিত খালিয়াজুরি ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় পাউবোর নেওয়া সবগুলো বাঁধের কাজ সঠিক সময়ে শেষ হয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান জেলার মদন, খালিয়াজুরি, কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জ উপজেলার চরহাইজদা বাঁধ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।