অভিযুক্তদের শতভাগ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে দুদক : কমিশনার

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেছেন, অভিযুক্তদের শতভাগ শাস্তি নিশ্চিত করতে বর্তমান কমিশন চেষ্টা করছে। পাঁচ বছর আগে যেখানে কমিশনের মামলায় ৩৭ ভাগ শাস্তি হতো, বর্তমানে তা ৬০ ভাগ হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার খাগড়াছড়িতে আয়োজিত এক গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদকের কমিশনার এ কথা বলেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৌর টাউন হলে দুর্নীতি দমন কমিশন, খাগড়াছড়ি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গণশুনানির আয়োজন করা হয়।
দুদকের কমিশনার বলেন, কমিশনের একার পক্ষে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করে দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধ করতে হবে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সুদর্শন দত্ত প্রমুখ।
গণশুনানিতে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে মৌজার দাম নির্ধারণ করা নেই। কিন্তু জেলা প্রশাসকের চিঠির মাধ্যমে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তারা ইচ্ছেমতো জমির দাম নির্ধারণ করে দেন। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশনের সময় বিশেষ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ আদায় করছে। তিনি জানতে চান, রেজিস্ট্রেশন ফি কেন ট্রেজারি চালানে নেওয়া হবে না। উত্তরে দুদক কমিশনার এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
ঠিকাদার সমিতির পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা এস এম শফি অভিযোগ করেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলা পরিষদ সাম্প্রতিক সময়ে দুই নোটিশে ৮৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ গোপনে ভাগাভাগি করে দিয়েছে। জবাবে জেলা পরিষদ সদস্য ও উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক মংশে প্রু চৌধুরী অপু অভিযোগ নাকচ করেন। তিনি জানান, এ প্রশ্নের উত্তর নির্বাহী প্রকৌশলীই ভালো দিতে পারবেন।
মংশে প্রু চৌধুরী অপু পাল্টা অভিযোগ করেন, জেলা পরিষদ, এলজিইডি, গণপূর্ত বিভাগসহ সব উন্নয়নকাজ পাঁচ ভাগ হলেও পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম গত পাঁচ বছর সিন্ডিকেট করে খাগড়াছড়ি পৌরসভার সব কাজ ১৫ শতাংশ ঊর্ধ্ব দরে মুষ্টিমেয় ঠিকাদারদের মাঝে বণ্টন করছেন। যেখানে সাধারণ ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। মেয়র নিজের খেয়াল-খুশিমতো পৌরবাসীর ওপর কর আরোপ করছেন। জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বাজার ফান্ডের জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে অবকাঠামো করছেন।
জবাবে পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম বলেন, ‘সরকারি নিয়মনীতি মেনে টেন্ডার করা হচ্ছে। কমিশন তদন্ত করুক। প্রমাণিত হলে দায় নিয়ে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে চলে যাব। তিনি পাল্টা জেলা পরিষদকে বাজার ফান্ডের নামে কতটুকু জায়গা আছে তা চিহ্নিত করার আহ্বান জানান। এ সময় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
গণশুনানিতে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য বিভাগসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দেন। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, দুর্নীতির শিকার হওয়া ব্যক্তিরা তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরেন। অভিযোগকারীদের প্রশ্নের উত্তরে অভিযুক্তদের বিভিন্ন কার্যদিবসের মধ্যে সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার।