খাগড়াছড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৮

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার আলুটিলা পর্যটন এলাকায় ট্রাকের চাপায় আহত চিকিৎসাধীন আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে আটজনের।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ববি মারমা (৩০) মারা যান।
বিষয়টি জানিয়ে চমেক ফাঁড়ি পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বলেন, নিহত ববি মারমা মহালছড়ি উপজেলার চেহাইউ মারমার মেয়ে।
বেলা ১১টার দিকে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হচ্ছে মহালছড়ি উপজেলার চুংড়াছড়ির নাইম্রা মারমা (৪০) ও তাঁর ছেলে চিংলা মারমা (১৩), একই এলাকার চাইলাপ্রু মারমার ছেলে উচিংনু মারমা (১৫), মংমং মারমা মেয়ে মাথিং মারমা (৫), চাইহ্লা মারমার মেয়ে টুনটুনি মারমা (১০), মংক্ররীর মারমার ছেলে অংক্যচিং মারমা (১২) ও রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের নাকপা এলাকার আক্যসুই মারমার ছেলে সাথোইপ্রু মারমা (১৫)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে পাথর বোঝাই (নুড়ি পাথরের বালি) একটি ট্রাক খাগড়াছড়ি যাচ্ছিল। পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আলুটিলা পর্যটন এলাকায় বৌদ্ধভিক্ষু ভদন্ত চন্দ্র মনি মহাস্থবিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে আয়োজিত মেলার একটি দোকানে ঢুকে যায় ট্রাকটি। এতে ঘটনাস্থলেই শিশুসহ সাতজন নিহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ও নিহতদের লাশ উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এর মধ্যে গুরুতরভাবে আহত এক নারী ও শিশুসহ তিনজনকে চমেকে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনায় আহতরা হচ্ছে মাটিরাঙা উপজেলার তবলছড়ি এলাকার স্নানাইউ মারমা (২৫), সদর উপজেলার মাইসছড়ি এলাকার সাজাউ জনি মারমা (২৮), মাটিরাঙা উপজেলার আলুটিলা এলাকার সুকেন ত্রিপুরা (২৮), চুংড়াছড়ি এলাকার উমেচিং মারমা, সদর উপজেলার খাগড়াপুর এলাকার পিপি রাণী ত্রিপুরা (২৪), রাঙামাটি জেলার সাজেকর দারিপাড়া এলাকার শান্তি রঞ্জন চাকমা (৪৫), মহালছড়ি উপজেলার চিংলামং মারমার ছেলে চিংক্যহ্লা মারমা (৮), একই এলাকার মংমং মারমার মেয়ে চিংম্রাউ মারমা (১৫) ও রনি মারমা (৩০)।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নয়নময় ত্রিপুরা জানান, আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি
দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসার পর হাসপাতাল এলাকায় শুরু হয় স্বজনদের আহাজারি। নিহতদের স্বজন আর আহতদের আর্তচিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ঘটনার খবর পেয়ে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার মীর মুশফিকুর রহমান, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল আমিন, খাগড়াছড়ির পৌর মেয়র মো. রফিকুল আলমসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে ছুটে যান।
লাশ হস্তান্তর ও সাহায্য সহযোগিতা
খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নিহতদের সুরতাল শেষে আত্মীয়-স্বজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানান, স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এদিকে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার মীর মুশফিকুর রহমান নিহত প্রত্যেক পরিবারকে সাত হাজার টাকা, আহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন হাজার টাকা, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পরিষদ সদস্য মংশে প্রু চৌধুরী অপু নিহত প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা, আহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন হাজার টাকা করে সহায়তা করেন। জেলা প্রশাসক এবং পৌরসভার পক্ষ থেকেও সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।