সেই ইটভাটায় ফের পুড়ছে কাঠ!

পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ‘ফরাজী ব্রিকস’ নামের ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটার মালিক আবদুস সালাম খোকন কোনো নিষেধাজ্ঞাই মানছেন না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার পরেও ইটভাটাটি চালু থাকায় গত ৩ জানুয়ারি সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহিমুল হাসান ওই অভিযানটি পরিচালনা করেন। ওই দিনই আগুন নিভিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় অবৈধ ইটভাটাটি। এর মাত্র ১২ দিন পর ইটভাটাটি আবারো চালু করা হয়। ১৫ জানুয়ারি থেকে ভাটায় নতুন করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
গত মঙ্গলবার বিকেলে ত্রিশালের দেওয়ানিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাফিজিয়া মাদরাসার প্রাচীর ঘেঁষা ‘ফরাজী ব্রিকস’ নামের ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেক কর্মচারী কাজ করছেন। ইটভাটাটি আগের মতোই চলছে। ইটভাটার মালিক খোকনকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুর আলম গতকাল বুধবার এনটিভি অনলাইকে বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক বছর আগে চালু হয় ‘ফরাজী ব্রিকস’ নামের ওই ইটভাটাটি। এর পাশেই একটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। ইটভাটাটির পাশে আবদুস সালামের একটি মুরগির খামারও আছে। সেটি থেকেও ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। যাতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এলাকাবাসী একটি লিখিত অভিযোগ দেন গত ২৬ অক্টোবর। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালককে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. আবদুর রাজ্জাক গত ১ নভেম্বর ওই ইটভাটা ও ফরাজী লেয়ার পোলট্রি ফার্ম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইটভাটার লাইসেন্স ছাড়া ইট তৈরি, ইট পোড়ানো ও বিক্রির সত্যতা পান।
পরিদর্শকের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন গত ৮ নভেম্বর ‘ফরাজী ব্রিকস’ এর মালিক আবদুস সালাম খোকনকে লিখিতভাবে ইটভাটার সব কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘ফরাজী ব্রিকস’ এর কার্যক্রম জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এমনকি বিদ্যমান আইনেরও পরিপন্থী, যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ ইট প্রস্তুত, ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও পশুরোগ বিধিমালা ২০০৮-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় আইনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই নির্দেশনার পরেও ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছিল কাঠ। তাই গত ৩ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে সেটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারপরেও চালু আছে ইটভাটাটি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুর আলম বলেন, ‘আমরা তার (আবদুস সালাম) ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। নতুন করে ইটভাটাটি চালু হয়েছে কিনা সেটা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরিবেশ আইন অমান্য করায় প্রচলিত শাস্তির বিধানে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া যেতে পারে বলেও জানান তিনি।