এখনো জ্বলছে ডিগনিটি, নির্মাণে অনিয়ম

আগুন নেভানোর আধুনিক ও পর্যাপ্ত সব ব্যবস্থা কারখানায় থাকার পরও শ্রীপুরের ডিগনিটি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড কারখানার আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার জন্য ওই কারখানার নিজস্ব দক্ষ অগ্নিনির্বাপণ কর্মীর অভাবকেই প্রাথমিকভাবে দায়ী করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া স্টিলের অবকাঠামোর ওপর ভবন নির্মাণে সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করাকেও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পরও আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত আগুন সম্পূর্ণ নেভাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ দিন সন্ধ্যা থেকে ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি নিয়ে ড্যাম্পিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে ডিগনিটি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড কারখানায় আগুন লাগে। এরপর সোমবার ভোরে আগুনের উত্তাপে স্টিলের অবকাঠামো নরম হয়ে সাততলা কারখানা ভবনের উপরের পাঁচটি তলা অর্থাৎ তৃতীয় তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত মুখ থুবড়ে মাটিতে ধ্বসে পড়ে। এতে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে সুতা ও কাপড়সহ বিভিন্ন দাহ্য বস্তু। প্রায় ২০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে মাঝে মাঝেই আগুন জ্বলে উঠছে। নিচের এ আগুন নেভাতে ঠিকমতো পানি ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আগুন পুরোপুরি নেভাতে দুটি বড় লেডারসহ আটটি গাড়ি নিয়ে ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিদর্শনে এসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান পিএসসি জানান, স্টিল স্ট্রাকচার নির্মাণ করতে গেলে স্টিলের কলামে যথাযথভাবে কনক্রিটের জ্যাকেটিং ও ফায়ার প্রুফ পেইন্টসহ বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে অনুসরণ করতে হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ তা যথাযথভাবে পালন করেনি। পোশাক কারখানার জন্য স্টিল দিয়ে এত বড় কারখানা নির্মাণ করা ঠিক নয়। এসব ক্ষেত্রে দোতলা থেকে তিনতলা ভবন নির্মাণ করাই বাঞ্ছনীয়। তিন তলার উপরে হলে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়ে পড়ে। কারণ আগুনে স্টিল দ্রুত গরম হয় এবং গলে যায়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসনই যেকোনো বহুতল ভবন নির্মাণে অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু তারা পোশাক কারখানার জন্য কীভাবে এত বড় স্টিলের ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিল তা বোধগম্য নয়। কারণ গার্মেন্ট কারখানা স্টিল স্ট্রাকচারে নিরাপদ নয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ডিজি আরো বলেন, গাজীপুরে বহু হাইরাইজ (বহুতল) বিল্ডিং রয়েছে। এখানকার ফায়ার স্টেশনে বড় মইবাহী অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি নেই। ফলে বহুতল ভবনে আগুন লাগলে উদ্ধারকাজ করতে ঢাকা থেকে মইবাহী অগ্নিনির্বাপক গাড়ি নিয়ে যেতে হয়। এতে বেশ সময় নষ্ট হয়। গাজীপুরেও এ ধরনের গাড়ি থাকা আবশ্যক।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক (ডিডি) নুরুল হক জানান, যে নিয়ম মেনে স্টিল ট্রাকচার তৈরি করতে হয় এই সুউচ্চ ভবন নির্মাণে তা অনুসরণ করা হয়নি।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, এ কারখানায় আগুন নেভানোর আধুনিক ও পর্যাপ্ত সব ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কারখানায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণকর্মীর অভাব থাকায় কারখানার লোকজন আগুন দ্রুত নেভাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে কারখানার ইউটিলিটি ইনচার্জ এমদাদুল হক জানান, কারখানার শ্রমিকদের অগ্নিনির্বাপণের মহড়া দেওয়া হলেও তারা খুব একটা দক্ষ হয়ে উঠেনি।
চাকরি নিয়ে শঙ্কায় শ্রমিকরা
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা কবে চালু হবে সেটি জানতে শ্রমিকরা বুধবার বিকেলেও কারখানা এলাকায় এসে ভিড় জমায়। কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত না পেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাঁরা হতাশ মনে বাড়ি ফিরে যান। শ্রমিকরা কারখানার মালিকের পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার নায়েবের বাজার এলাকার অপর কারখানায় নিয়োগ এবং মে ও জুন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবি জানান।
কারখানার প্রক্রিয়াকরণ প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, কর্তৃপক্ষ ৭ জুন পর্যন্ত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে। ৮ জুন কারখানা খুলবে এমন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ চাকরিহারা শ্রমিক ও কারখানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং পাওনাদি পরিশোধ করবে।