পরিবহনে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি থেকে রক্ষা করতে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা ভাড়ায় বাস সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আজ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ  পর্যন্ত বাস চলাচল শুরু হয়েছে বলে বাসসের এক খবরে বলা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ শহীদ মিনার পরিবহন’ পরিচালিত এ বাসের উদ্বোধন করেন। এ সময় পরিবহনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ, পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মো. মমতাজ মিয়া, পরিচালক মনিরুল হক মন্টু, কবি লিটনসহ বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে শহীদ মিনার পরিবহনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এই বাস সার্ভিসের আওতায় আজ থেকে শহীদ মিনার পরিবহনের চারটি বাস ঢাকা থেকে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করবে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারবেন। তবে এই বাসে সাধারণ যাত্রীরা ঢাকা-ইলিয়টগঞ্জ জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারবেন। একই পথে আরো ছয়টি বাস শিগগির চলাচল শুরু করবে।

আ ক ম মোজাম্মেল হক আলোচনা সভায় বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যক্তিগত মালিকানায় বিনা ভাড়ায় বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগকে আমি স্বাগত এবং উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই। এ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আগামী জুলাই থেকে মাসিক ভাতা ১০ হাজার টাকা করা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ, চূড়ান্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়পত্র প্রদান অন্যতম।

শহীদ মিনার পরিবহনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রচার অব্যাহত রাখতে এই বিশেষায়িত প্রতিটি বাসের গায়ে বায়ান্নার ভাষা আন্দোলনসহ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের আলোকচিত্র লাগানো থাকবে। এ ছাড়া এই পরিবহনের প্রতিটি বাস থেকে আয়ের অংশ থেকে ৫০০ টাকা করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শহীদ পরিবারকে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিটি বাসে চাকরি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সন্তানদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা ভাড়ার বাস চালুর কারণ প্রসঙ্গে পরিবহনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘একদিন একটি বাস থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করে নামিয়ে দিতে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সেদিনই ভেবেছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্রি বাস চালু করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ 

শহীদ মিনার পরিবহনের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুসের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের তিন নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা দুলা মিয়া বীরবিক্রমের ছোট ভাই।