‘চোখের সামন’ থেকে দ্বীপে সরানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের

কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সরিয়ে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপ উপজেলার পাশে ঠ্যাঙ্গামারা দ্বীপে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে এএফপি। দ্য টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
মিয়ানমার শরণার্থীবিষয়ক সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব অমিত কুমার বল এএফপিকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হাতিয়া দ্বীপে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প অবশ্যই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, এ বিষয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু অনানুষ্ঠানিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
পর্যটন শহর কক্সবাজারে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শরণার্থীদের শিবিরগুলো নোয়াখালীর দ্বীপ হাতিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অমিত কুমার বল আরো জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কক্সবাজার থেকে ‘সুবিধাজনক’ স্থানে সরাতে কয়েক মাস আগেই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, ‘বাংলাদেশ হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তর করছে। উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, যন্ত্রণাবিদ্ধ একটি সম্প্রদায়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চোখের সামন থেকে সরানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস বৃহস্পতিবার সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের (চট্টগ্রাম) কাছ থেকে হাতিয়ার দ্বীপ অঞ্চলে সুবিধাজনক ও প্রশস্ত জায়গা পাওয়া যাবে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সে হিসেবে হাতিয়ার চরাঞ্চলের ৫০০ একর জায়গার প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি।’
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাতিয়ার একটি চরে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য শিবির স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য দ্বীপটির সাড়ে ১২শ একরের বিশাল সরকারি খাসজমির ৫০০ একর জমি ক্যাম্প করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।’ গত মাসে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সরেজমিনে ক্যাম্পের জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন বলেও জানান তিনি।
হাতিয়া সদর থেকে ক্যাম্পের স্থান কত দূর—জানতে চাইলে মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন জানান, স্পিডবোট দিয়ে ঠ্যাঙ্গামারা দ্বীপে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের কোনো একটি অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের সরানোর একটি প্রাথমিক কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভূমি নির্বাচনের জন্য বিভাগীয় কমিশনার সাহেব নোয়াখালীর জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জেনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু হলেই বিস্তারিত জানানো যাবে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রপথে মানব পাচার ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ক্যাম্প স্থানান্তরের প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হবে। পাশাপাশি আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে দেশের অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ।
সরকারের এ পরিকল্পনা বাতিল করতে অনুরোধ জানিয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ ইসলাম। বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সরকারের এমন পদক্ষেপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। আমরা চাই, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এখান থেকেই সমস্যার সমাধান করুক।’
টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে রোহিঙ্গা নেতারা বলেছেন, সরকারের পরিকল্পনায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁদের চোখের সামন থেকে সরানো হচ্ছে মাত্র।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে ৩৪ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকলেও এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছেন। এসব রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমারের নাগরিক। নিজ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের সহিংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে চলে এসেছেন। অমিত কুমার বল এএফপিকে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে কক্সবাজারে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে মাদক, মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে সরকার পর্যটন খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দুটিকে দূরের কোনো এলাকায় স্থানান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।