সেই তেঁতুলতলা মাঠে হলো ঈদের জামাত, খুশি এলাকার বাসিন্দারা

রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের দিন আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ওই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এলাকাবাসীর পক্ষে ওই ঈদের জামাতের আয়োজন করছে উত্তর ধানমণ্ডি মসজিদ কমিটি। মাঠে নামাজ আদায় করতে পেরে এলাকার বাসিন্দারা খুশি।
মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে উত্তর কলাবাগান ৩৮ নম্বর ভবনের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুদের খেলার মাঠ ও ঈদের নামাজসহ সামাজিক কার্যক্রমের জায়গা হলো এ তেঁতুলতলা মাঠ। এ মাঠে আমরা ঈদের জামাত করতে পারছি, এটা অবিশ্বাস্য। ঈদে মাঠটাই এলাকাবাসীর কাছে বড় পাওয়া। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছরে এত মানুষের সঙ্গে একত্রে নামাজ পড়া হয়নি। এবার করোনার ভয় নেই। মাঠ নিয়েও শঙ্কা কেটে গেছে। তাই অনেক আনন্দ নিয়ে নামাজ পড়লাম।’ এ মাঠে ঈদের জামাতে এত লোক আগে কখনও হয়নি বলেও তিনি জানান।
তেঁতুলতলা মাঠে ঈদের জামাত
মাঠে ঈদের নামাজ পড়তে পারা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ৫০ নম্বর, উত্তর কলাবাগানের বাসিন্দা সাহেদ ওসমানও। তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোয় যেভাবে আমরা এ মাঠেই ঈদের জামাত করছিলাম, এবারও সেভাবেই করতে পারছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।’
নিজে এ মাঠে খেলাধুলা করেছেন, তাঁর দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে শাহরিয়ার ওসমানও এ মাঠেই খেলাধুলা করে বড় হয়েছে জানিয়ে সাহেদ ওসমান বলেন, মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হলে ভালো হবে। সেইসঙ্গে মাঠে সীমানায় ইটের দেয়াল ভালো লাগছে না। এ দেয়াল ভেঙে ফেলতে হবে। বাইরে থেকেই মাঠ দৃশ্যমান হবে, এমন লোহার তৈরি গ্রিল স্থাপন করলে ভালো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এরই মধ্যে বলেছেন, তেঁতুলতলা মাঠের মালিকানা পুলিশেরই থাকবে। তবে, এখন যেভাবে মাঠ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, সেভাবে ব্যবহার হবে। সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে গত বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ মাঠের বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে স্থাপনা নির্মাণের কাজ এর মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাঠটি পুলিশকে লিখে দেওয়া হয়েছে। এটি পুলিশেরই থাকবে। তবে, এটি আগের মতোই খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ছেলেমেয়েরা এখানে খেলাধুলা করবে। তাদের জন্য এটি উন্মুক্ত থাকবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কলাবাগানের তেঁতুলতলা যে জায়গাটি কলাবাগান থানার জন্য সরকার আমাদের হ্যান্ডওভার করেছিল, আমরা জায়গাটির জন্য অ্যাপ্লাই করছি ২০১৭ সালে। সেটি নিয়ে দেখলাম, সে এলাকায় খেলার জায়গাই নেই। প্রধানমন্ত্রীও পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু খালি জায়গা নেই, বিনোদনের কিছু নেই, সেজন্য তিনি বলেছেন, পুলিশের জমি সেভাবে থাকুক। কোনো কনস্ট্রাকশন যেন না হয়। যেভাবে চলছে চলতে থাকুক। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘জায়গাটি তো পুলিশেরই। প্রাচীর যতটুকু হয়েছে সেভাবেই। আগে যেভাবে ব্যবহার হতো, সেভাবেই এলাকাবাসী ব্যবহার করবে। জায়গাটি পুলিশের থাকবে। প্রাচীর খুব বেশি হয়নি। যদি কোনো অসুবিধা হয়, আমরা দেখব। কিন্তু, জায়গাটি পুলিশের, পুলিশেরই থাকবে। রক্ষণাবেক্ষণ পুলিশই করবে। এখানে যেভাবে ব্যবহার হচ্ছিল, সেটি কনটিনিউ থাকবে।’
কলাবাগান থানা কোথায় হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমরা দেখব। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে। এখন আপাতত কিছু হচ্ছে না। নির্মাণকাজ তো অবশ্যই বন্ধ থাকবে। তবে, রক্ষণাবেক্ষণ পুলিশই করবে। খেলার মাঠের জন্য উপযোগী জায়গা সেটি নয়। যেভাবে ইউজ করা হচ্ছিল, সে এলাকার লোক যেভাবে ইউজ করছে, সেভাবেই থাকবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে।’
এর আগে তেঁতুলতলা খেলার মাঠ ইস্যুতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান নগরবিদ ইকবাল হাবিব ও পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
তেঁতুলতলা মাঠ এলাকাবাসী ও শিশুদের ফিরিয়ে না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশবাদী, সংস্কৃতিকর্মী ও স্থানীয়রা। সেখানে থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-মিছিল করেন তাঁরা। মাঠের সীমানায় ১৪টি দেশীয় গাছও রোপণ করা হয়। খেলার মাঠ হিসেবে জমিটি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।