সিনহা হত্যা মামলা : পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী ৪ দিনের রিমান্ডে

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে র্যাব। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে র্যাবের একটি দল কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রথমে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের র্যাবের কক্সবাজার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন।
রিমান্ডে নেওয়া তিনজন হলেন টেকনাফ মারিশবুনিয়া এলাকার নুরুল আমিন, নিজামুদ্দিন ও মো. আয়াছ।
গত ২৫ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ওই তিন স্বাক্ষীকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। ওই দিন শুনানি শেষে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন বিচারক তামান্না ফারাহ।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে আসামি পুলিশ সদস্যদের মুখোমুখি করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের সঠিকতা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
খায়রুল ইসলাম আরো জানান, এ মামলার তদন্ত এমনভাবে করা হচ্ছে, যাতে মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
এ মামলার প্রধান তিন আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে গতকাল শুক্রবার তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে যায় র্যাব। অপর চার পুলিশের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলেও তাঁদের এখনো রিমান্ডে নিয়ে যায়নি র্যাব।
এর আগে গত ২০ আগস্ট প্রথম দফায় পুলিশের মামলার তিন সাক্ষীর সাত দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছিল। সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে ১১ আগস্ট মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।
গত ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী ও নন্দদুলাল রক্ষিতসহ সাত পুলিশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ মামলার অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মো. মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এ নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই। তবে আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
ওই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এদিকে, পুলিশের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত হয়েছেন।