রোহিঙ্গা সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান আছে মিয়ানমারে : ইউএনএইচসিআর

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর। একইসঙ্গে সংস্থাটি যোগ করেছে, ‘রোহিঙ্গা সংকটের পরিপূর্ণ সমাধান মিয়ানমারের কাছেই আছে। অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেটের সব সুপারিশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এটি সম্ভব। আর মিয়ানমার সরকারও সেটি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দিনটি ধরেই আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এসব বক্তব্য দিয়েছে বিশাল শরণার্থীদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইউএনএইচসিআর। জাতিসংঘের এই সংস্থা, মিয়ানমারে ও এর বাইরে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত ও রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বের কাছে ফের সহায়তা ও সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের তিন বছর পূর্তি হয়েছে আজ। ২০১৭ সালের এ দিন সকাল থেকে উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে থাকে বাংলাদেশে। এরপর ছয় মাস ধরে চলে এই অনুপ্রবেশ। এই সময়ের মধ্যে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারের দুই উপজেলায় আশ্রয় নেয়।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদারের দেওয়া হিসাবমতে, ‘এখানে সাড়ে ছয় হাজার একর জমির উপর প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। জনসংখ্যার ঘনত্বের হিসাবে যদি বলেন, তাহলে এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বাস করে।’

আজকের বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। এর তিন বছর পর আজও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত পরিবর্তিত পরিস্থিতির নতুন চাহিদাগুলো মেটানো এবং এই সংকট সমাধানের লক্ষ্যে আরো বেশি কাজ চালিয়ে যাওয়া।
‘রোহিঙ্গাদের হিসাবে তাঁদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আজ মিয়ানমারের বাইরে রয়েছে। ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ নিবন্ধন অনুযায়ী কক্সবাজারে অবস্থান করছে প্রায় আট লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশ দেখিয়েছে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে তাদের সুরক্ষা, ব্যবস্থা করেছে জীবন রক্ষাকারী মানবিক সাহায্যের। আজ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিবন্ধিত প্রতি দশজন রোহিঙ্গার মধ্যে নয়জন বাস করে বাংলাদেশে। এই মহানুভবতার প্রতিদানস্বরূপ রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণের জন্য নিরন্তর সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আরো জানায়, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজন সর্বস্তরের অংশগ্রহণ, মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে নতুন করে কার্যকরী আলোচনার সূত্রপাত, এবং এর পাশাপাশি দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরির পদক্ষেপ। এসবের জন্য প্রয়োজন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের চলাফেরার ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার, আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ গ্রামে ফেরার সুব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ। শুধু মিয়ানমারের বাইরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই নয়, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আরেকটি লক্ষ্য হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের আশানুযায়ী তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। সেজন্য শুধু মিয়ানমারে স্থায়ী সমাধানের জন্য নয়, আরো কাজ করতে হবে আশ্রয় প্রদানকারী দেশের বাইরে তাদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এবং সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার জন্য।’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জানায়, বাংলাদেশ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের মানসিক শক্তি ও প্রত্যয় গত তিন বছর ধরে কাজ করছে মানবিক কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে। এই মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণের প্রতিও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সহযোগিতার হাত। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহস ও মনোবলকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাব যেন পৃথিবী তাদের ভুলে না যায়।