ভৈরবে নানা সীমাবদ্ধতায় চলছে করোনার আইসোলেশন সেন্টার

কিশোরগঞ্জ জেলায় ভৈরব করোনার হটস্পট। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে গত বছরের ১৭ মার্চ ২০ শষ্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারকে করোনার আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আইসোলেশন সেন্টারটি এক বছরেরও বেশি সময় পার করলেও এখানে কোভিড সংক্রান্ত কোনো চিকিৎসা সামগ্রী নেই বললেই চলে।
জানা গেছে, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই চলছে করোনার এই আইসোলেশন সেন্টার। এখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সুবিধা ছাড়া আর কোনো সুবিধা নেই।
সাবেক স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান দুইবার সেন্টারটি পরির্দশন করলেও মেলেনি কোভিড সংক্রান্ত কোনো চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। তাছাড়া এই আইসোলেশন সেন্টারটিতেই করোনার উপসর্গধারীদের নমুনা সংগ্রহ এবং করোনার প্রতিষেধক টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জনবল ও আর্থিক বরাদ্দ ছাড়া আইসোলেশন সেন্টারটি শেষ পর্যন্ত কত দিন চালিয়ে নেওয়া যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৬১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে চার হাজার ৪৩৮ জনের। সংক্রমণ হার ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। ভৈরবে ছয় হাজার ১৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা থেকে করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা এক হাজার ৪৬ জন। শনাক্তের হার ১৭ শতাংশ। জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৭৫। এর মধ্যে ভৈরবের ১৮ জন। জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে শুরু থেকেই ভৈরব স্পর্শকাতর স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বর্তমানে উপজেলাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর মার্চের দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ১০ একর জায়গার মধ্যে স্থাপিত হয় ২০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টার। গত বছর করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে এটিকে করোনা রোগীর আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জনবল পাওয়া যায়নি। ট্রমা হাসপাতালের জনবল পেলে আইসোলেশন সেন্টারটি ভালোভাবে চলত বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
সেন্টারটিতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপনের কথা থাকলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আইসোলেশন সেন্টারটিতে একসঙ্গে ১৮ জন রোগীকে আইসোলেটেড রাখা যায়। রোগীর অবস্থা অবনতি হলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল হাসপাতাল অথবা ঢাকায়।
ভৈরবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পরিবারের এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার বাবাকে সময়মতো যদি ভৈরবে চিকিৎসা দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো বেঁচে যেতেন। কিন্তু কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেলে যেতে হবে শুনেই বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং রাস্তায় মারা যান।’
এমন ক্ষোভের কথা জানালেন অনেকে। করোনার হটস্পট হওয়া সত্ত্বেও এক বছরেরও বেশি সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি পড়েনি ভৈরবে।
করোনা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাজেট দিয়ে আইসোলেশন সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে। জনবল সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা দূরীকরণের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিশেষ করে ট্রমা হাসপাতালের জনবল অত্যন্ত প্রয়োজন। যা এখনো পাওয়া যায়নি।’
ভৈরব উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা বলেন, ‘একটি দাতা সংস্থার অর্থায়নে আইসোলেশন সেন্টারটিতে সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আইসোলেশন সেন্টারের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’