কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পরও অসচেতনতায় ১২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে শামীম আহমেদ মুন্সী (৬৭) নামের এক ব্যক্তি জ্বর ও সর্দি নিয়ে টিকা নেওয়ায় মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের অভিমত, করোনার টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এজন্য তারা মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরামর্শ নিয়ে টিকা নেওয়া অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খোরশেদ আলম জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়। আজ বুধবার পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছে সাত হাজার ৮৫২ জন। টিকা নিয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫৩ জন। ভৈরবের স্থানীয় ট্রমা সেন্টারে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ১২ জনের সবাই এখানেই টিকা নিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. খোরশেদ আলম জানান, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর ৫২ থেকে ৬৫ শতাংশ এন্টিবডি তৈরি হয়, আর দ্বিতীয় ডোজের পর হয় ৯৫ শতাংশ। তাই প্রথম ডোজ গ্রহণের পর কেউ যদি অসচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলেন তবে তার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডা. খোরশেদ জানান, টিকা নেওয়ার পর মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম শামীম আহমেদ মুন্সি (৬৭)। গত ৮ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণ এলাকার মুন্সিবাড়ীর এই বাসিন্দা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি অসুস্থবোধ করেন এবং শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। ওই দিনই তিনি কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরের দিন ওই হাসপাতালে শামীম আহমেদ মুন্সি মারা যান। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ছিল।

শামীম আহমেদ মুন্সির বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর ছোটভাই মোজাম্মেল হক মুন্সি জানান, ওই দিন ভাবি আর ভাই একসঙ্গেই টিকা নেন। এর দু-তিন দিন আগে থেকে তাঁর সামান্য জ্বর ও সর্দি ছিল। তবে বিষয়টি তিনি কাউকে জানাননি।

এদিকে, টিকা নেওয়ার ১০ দিন পর করোনার উপসর্গ দেখা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. মমতাজুল হকের। পরে পরীক্ষায় তাঁর করোনা পজিটিভ আসে। তিনি বলেন, ‘টিকা গ্রহণের সঙ্গে করোনা পজিটিভের কোনো সম্পর্ক নেই। টিকা নেওয়ার আগেই হয়তো ভাইরাস দেহে ছিল। এ ছাড়া টিকা দেহে কাজ করতে থাকে গ্রহণের ২১ দিন পর থেকে। ১০ দিনের মাথায় তাঁর উপসর্গ দেখা দেয়। টিকা গ্রহণের সময় আমি বাহ্যিকভাবে বেশ সুস্থ ছিলাম।’

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, করোনার শুরু থেকেই কিশোরগঞ্জ জেলাকে ‘হট স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে জেলার শীর্ষে ছিল ভৈরব উপজেলা।  এ পর্যন্ত এখানে চার হাজার ৯৮৬ জনের নমুনা থেকে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮২৬ জনের। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৬ জন। তবে গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে থাকে। আগস্টে এসে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।