বিয়ের জন্য কাউন্সিলর খোরশেদকে ‘হেনস্তা’ এক নারীর, স্ত্রী-সন্তানকে ‘হত্যার হুমকি’

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে যোগাযোগের একপর্যায়ে সাইদা আক্তার নামের এক নারী তাঁকে বিয়ের জন্য হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। এবং এসব ব্যাপারে নানাভাবে তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ তাঁকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
খোরশেদ আরও দাবি করেন, এরই মধ্যে ওই নারী তাঁকে বিয়ে করার জন্য গাড়িতে করে কাজি নিয়ে তাঁর বাসায় এসেছিলেন। তবে এসব কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে তাঁকে বোঝানো হয়। এরপরও তিনি উচ্চপদস্থ বিভিন্ন ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এও হুমকি দিয়েছেন যে, পাসপোর্টে খোরশেদের নাম স্বামী হিসেবে ব্যবহার করবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট মানুষকে দেখিয়ে বিভিন্ন রকম দাবি করতে থাকেন তিনি।
ওই নারীর পরিচয় দিতে গিয়ে খোরশেদ বলেন, ‘তাঁর নাম সাইদা আক্তার। এরই মধ্যে তাঁর তিনটি বিয়ে হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ী। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এক মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বিভিন্ন উচ্চপদস্থ লোকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় আছে। তিনি নিজেকে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে মানুষকে জিম্মি করেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ভালো কথা বলে বিভিন্ন স্ক্রিনশটকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।’
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শনিবার লাইভে এসে এসব অভিযোগ করেন খোরশেদ। এ সময় তাঁর স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা সঙ্গে ছিলেন। ওই ফেসবুক লাইভে লুনা তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানান।
মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। গত বছর করোনা মহামারিতে কয়েকজন বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে মৃত মানুষদের মরদেহের গোসল ও দাফনকাজে সহায়তা করেন। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে অক্সিজেন সেবা দিয়ে যান তিনি। এজন্য ওই সময় বেশ আলোচিত হন। এ কাজ করার মধ্যেই একপর্যায়ে নিজে করোনায় আক্রান্ত হন খোরশেদ। পরে তাঁর স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হন।
কীভাবে এমন ঘটনার সূত্রপাত—এ ব্যাপারে জানাতে গিয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘একটি নিউজ পোর্টালে আমাদের অক্সিজেন সেবার নিউজ প্রকাশিত হয়েছিল। তখন সেই নিউজের নিচে এক নারী মন্তব্য করেন এবং একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সহায়তা হিসেবে দিতে চান। তিনি জুন মাসের শেষের দিকে অক্সিজেন সিলিন্ডার হস্তান্তর করেন এবং জুলাই মাসের শেষ দিকে তিনি আমার সঙ্গে ফেসবুকে অ্যাড হন। এরপর তিনি আমার সঙ্গে গল্প-গুজব করতে থাকেন। আমিও তাঁর সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা বলি।’
খোরশেদ বলেন, “কিছুদিন যাওয়ার পর আমি তাঁর মতি-গতি আন্দাজ করতে পারি এবং তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এরপর তিনি আমাকে প্রশাসনিকভাবে এবং দেশের উচ্চ পর্যায়ের বড় বড় পদ-পদবিধারী ব্যক্তিদের নামে হুমকি-ধমকি দিয়ে কথা বলার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করেন।
এরপর তাঁর ছেলেকে আমি বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করি। এরপর তাঁর ছেলে আমাকে বোঝায় যে, ‘না আঙ্কেল, এগুলো সম্ভব নয়। আপনার সঙ্গে হয়তো দুষ্টামি করে।’ পরে যখন আমি দেখি যে, তাঁর ছেলেকে বলার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। এরপর নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে আমি তাঁর ভগ্নিপতিকে নিয়মিত এই অভিযোগগুলো জানাতে থাকি। এতে করে তিনি (ওই নারী) আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর বলপ্রয়োগ করা শুরু করেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীকে এ বিষয়টি জানাই। আমার স্ত্রী বলে যে, তিনি হয়তো দুষ্টামি করছেন।”
খোরশেদ বলেন, ‘এমন অবস্থায় একদিন তিনি গত ২১ জানুয়ারি গাড়িতে করে কাজি নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন, আমাকে বিয়ে করার জন্য। এরপর আমার পরিবারসহ তাঁকে আটকাই এবং তাঁকে বলা হয়, এগুলো কোনোভাবেই সম্ভব না।
এরপর থেকেই তিনি আমাদের জীবনটাকে বিষিয়ে তুলেছেন। তিনি নিয়মিত আমাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের এমন কোনো জায়গা নেই—আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ যাঁদের সঙ্গে নির্বাচন করি—প্রত্যেকের কাছেই গেছেন। আমি সম্মান জানাই আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের যে, তাঁরা তাঁকে সবিনয়ে প্রতিহত করেছেন। এরপর তিনি পাড়ায়-মহল্লায় হেঁটে হেঁটে কখনও বলে বেড়ান যে, আমি তাঁর খালাতো বোনকে বিয়ে করেছি, কখনও বলেন তাঁর বান্ধবীকে বিয়ে করেছি, কখনও বলেন তাঁর ছোট বোনকে বিয়ে করেছি, আবার কখনও বলেন তাঁকে বিয়ে করেছি। এবং তাঁর সঙ্গে যে আমার মেসেঞ্জারে কথা হয়েছে, সেই মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট মানুষকে দেখিয়ে বিভিন্ন রকম দাবি করতে থাকেন।
‘তাঁর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় শরণাপন্ন হই। পরে তাঁকে সেসব জায়গায় ডাকা হলে কখনও খালাতো বোন, কখনও মামাতো বোন-এসব বলেন। পরে সবাই তাঁকে বিয়ের কাবিনের কাগজ দেখাতে বলেন। এরপর ২৪ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা সময় চাওয়ার পর তিনি আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। আবার নতুনভাবে বিরক্ত করা শুরু করেন।
“এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের অনেকেই বিষয়টি জানতে পারেন। এবং দুদিন আগে দুটি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় যে, ‘কমিশনার খোরশেদ দুই স্ত্রীর গ্যাঁড়াকলে’।”
কাউন্সিলর বলেন, ‘আমি যেহেতু প্রথম থেকেই ইজ্জতের ভয় পাই, তাই তিনি আমার এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করেন এবং ব্ল্যাকমেইলিং করে এতদূর পর্যন্ত এগোগান। ইজ্জতের ভয় পাই বলেই আমি এতদিন এটি সহ্য করেছি। ২১ জানুয়ারির পর থেকে তিনি নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে, টেলিফোনে আমাকে, আমার স্ত্রীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছেন। তিনি প্রথমে নিয়মিত আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর পাসপোর্টে আমার নাম স্বামী হিসেবে দেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। এগুলো সবকিছুই আমার মেসেঞ্জারে সংরক্ষিত আছে। তিনি এও হুমকি দিয়েছেন যে, আমাকে-আমার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করবেন এবং আমার ছেলেকে হত্যা করবেন। এভাবে একের পর এক অত্যাচারের ফলে আমি বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকে লিখিতভাবে জানিয়ে রেখেছিলাম। এরপরও আমি মুখ খুলিনি। কারণ, যেহেতু এটি নারীঘটিত বিষয়, তাই একজন নারীর কথাই মানুষ আগে শুনবে এবং আমাকে ভুল বুঝবে—এই লজ্জা থেকে আমি দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থেকেছি।’
খোরশেদ আরও বলেন, ‘তাঁর (ওই নারীর) দুটি ইস্যু আছে—একটি হলো, আমার ভাইয়ের মার্ডার কেসে তাঁর এক ছোট ভাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। সে আমাদের এজাহারভুক্ত আসামি ছিল না, কিন্তু পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। ওই সময় নাকি তিনি আমার কাছে এসেছিলেন তদবির করার জন্য, তাঁর ভাইকে ছাড়ানোর জন্য। আমি নাকি খারাপ ব্যবহার করেছি।
আরেকটা বিষয়, তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে একটা জায়গা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। পরে ওই জায়গা নিয়ে মামলায় রাজউক জিতে যায় এবং রাজউক যে মূল মালিক তাঁকে জায়গা ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই জায়গা নাকি ছুটে যাওয়ার পেছনে আমার হাত আছে। কিন্তু, এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’
এসব ঘটনায় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। এবং এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে বলেও জানান কাউন্সিলর খোরশেদ।