বাড়ি ভাড়ার আদর্শ মান নির্ধারণে কমিশন গঠন কেন নয় : হাইকোর্ট

বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ভাড়া নির্ধারণ পদ্ধতি সংক্রান্ত ১৫ ধারা কেন আইন কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওয়ার্ড ভিত্তিক রেন্ট কন্ট্রোলার (ভাড়া নিয়ন্ত্রক) নিয়োগ, বাড়িভাড়া আইনের অসঙ্গতি দূর করে ভাড়ার আদর্শ মান নির্ধারণ ও সুপারিশের জন্য একটি কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব, ভূমি সচিব, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
এক সম্পূরক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রোববার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেন।
১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫ ধারা চ্যালেঞ্জ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ সম্পূরক ওই আবেদনটি করে।
আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘নিয়ন্ত্রক, বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে, কোন বাড়ির মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করবেন এবং এমনভাবে সেটি নির্ধারণ করবেন যেন তার বাৎসরিক পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থিরকৃত ওই বাড়ির বাজার মূল্যের ১৫ শতাংশের সমান হয়। তবে শর্ত থাকে যে, যে ক্ষেত্রে মানসম্মত ভাড়ার পরিমাণ ভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের অধীন নির্ধারণ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া, নিয়ন্ত্রক কর্তৃক সংশোধন বা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত, এই ধারার অধীন নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া হিসাবে গণ্য হবে।’
সম্পূরক আবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ১৭ মে হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৫ সালের ১ জুলাই পর্যবেক্ষণসহ জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন। কিন্তু রায় প্রকাশের আগেই ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বজলুর রহামনের অকাল মৃত্যু হলে বাদীপক্ষ রায়ের অনুলিপি পায়নি। পরবর্তী সময়ে এই রিট মামলাটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে হাইকোর্টের এই বেঞ্চে আসে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া আইনে ভাড়া নির্ধারণ করার যে পদ্ধতি বলা আছে, সেই পদ্ধতি অনুসারে এখন যে বাসার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা সে বাসার ভাড়া হবে ৯০ হাজার টাকা। এটাই হলো দেশের প্রচলিত আইন। এই কারণে ভাড়া নির্ধারণের জন্য মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে বিধান ছিল সে ব্যাপারে কেউ আদালতে যাচ্ছে না। কারণ এটা অসম্ভব ও অকার্যকর। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এইচআরপিবির পক্ষ থেকে আইনটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত শুনেছেন।’
মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, ‘মানসম্মত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। যার ফলে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ হচ্ছে। অনেক বাড়িওয়ালাই ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াচ্ছে, অনেক ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ভাড়াটিয়া যে আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাবে, আইনি জটিলতা এতটাই বড় যে সে কারণে সেটা তারা পারছে না। এই কারণে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম কমিশন গঠনের জন্য।’ সেই আবেদন শুনে আদালত রুল জারি করেছেন বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।