সালতামামি
বছরজুড়ে প্রশাসনের আলোচিত ১০ ঘটনা

২০১৯ সাল শুরু হয় নতুন সরকারের যাত্রা দিয়ে। বছরজুড়েই প্রশাসনে অনেক ঘটনা ঘটে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। হয় নতুন নতুন অনেক আইন। অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনাও ঘটে প্রশাসনে। এর মধ্য থেকে আলোচিত দশটি ঘটনা :
১. নতুন সরকারের যাত্রা শুরু
নতুন মন্ত্রিসভার দায়িত্বভার গ্রহণের মাধ্যমে ২০১৯ সালের যাত্রা শুরু। একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন টানা তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ২৫৬টি আসন আর মহাজোট পায় ২৮৮টি। যার মধ্যে জাতীয় পার্টি ২২টি, জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, বিকল্পধারা দুটি, তরীকত ফেডারেশন একটি ও বাংলাদেশ জাসদের একটি আসন রয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন তিনটি আসনে। ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আইনপ্রণেতা হিসেবে জাতীয় সংসদে শপথ নেন। এদিন বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানালে ৬ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে ৪৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেন। পরদিন ৭ জানুয়ারি ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী শপথ নেন। ওই দিন শপথ অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শপথবাক্য পাঠ করান। এর মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনা টানা তিনবার এবং মোট চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী ও সরকারপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
৮ ডিসেম্বর নবনিযুক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা সচিবালয়ে এসে নিজ নিজ দপ্তরে যোগ দেন। এবারের ৪৭ জনের মন্ত্রিসভায় ২৭ জনই নতুন মুখ। অন্যদিকে, বাদ পড়ছেন আগের মন্ত্রিসভার ৩৪ জন। এ ছাড়া আগের মন্ত্রিসভার পাঁচজন প্রতিমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন। তাঁদের তিনজন আগের দায়িত্ব পেয়েছেন।
২. সচিবালয়কে নীরব এলাকা ঘোষণা
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়কে নীরব এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। গত ২৫ নভেম্বর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।
রাজধানীর জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, আবদুল গনি রোড, তোপখানা রোড ও সচিবালয় লিঙ্ক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় হর্ন বাজালেই জেল ও জরিমানা গুনতে হচ্ছে যানবাহন চালকদের।
২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৪০ ডেসিবেল। ওই বিধিমালার ধারা ৮(২) এ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথম অপরাধের জন্য কমপক্ষে এক মাস কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। পরবর্তী অপরাধের জন্য কমপক্ষে ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তাকে হর্নমুক্ত রাখার বিষয়ে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সচিবালয়ের চারপাশ হর্নমুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নীরব এলাকায় পরিণত হতে যাচ্ছে। ঢাকার মতো মেগা সিটিতে এই ধরনের কার্যক্রম শুধু সরকারি আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য। সবার সহযোগিতায় এ কার্যক্রম সফল হতে পারে।’
৩. সড়ক পরিবহন আইন
চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয় বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন। তবে প্রস্তুতির জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে ১৭ নভেম্বর আইনটি প্রয়োগের উদ্যোগ নেয় সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আইনটি প্রয়োগে সাফল্য আনতে নানা উদ্যোগ নিলেও শুরুতেই হোঁচট খায় সরকার। ওই দিনই পরিবহন শ্রমিকরা দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘট ডেকে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়। সারা দেশে তৈরি হয় এক অরাজক পরিস্থিতির।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে জাতীয় সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইনটি। ওই বছরের ৮ অক্টোবর আইনটির গেজেট প্রকাশিত হয়। এর ১১ মাস পর চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গেজেটে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ১-এর উপধারা (২)-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর তারিখকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ভুয়া লাইসেন্সের জন্য শাস্তি আরো বেশি। সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ধারায় ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য বাড়ানো হয়েছে শাস্তি ও জরিমানা।
লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এ পয়েন্ট। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে দণ্ডবিধি অনুযায়ী। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪(বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হবে। তবে পরিবহন শ্রমিকদের ব্যাপক তাণ্ডবের মুখে সরকার আইনটি পুরোপুরি প্রয়োগ করা থেকে আবার সরে আসে।
৪. পেঁয়াজ নিয়ে অস্থির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। ভারতের এক ঘোষণায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর ৩০ টাকা কেজিদরের পেঁয়াজ ৯ টাকা থেকে ১০০ টাকায় পৌঁছে যায়। ওই দিন ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির দাম বাড়িয়ে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত বাংলাদেশে পুরোপুরি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে আরেক দফা বেড়ে পেঁয়াজের কেজি আড়াইশ টাকার ওপরে চলে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিমানে করে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে দফায় দফায় বৈঠক করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। পেঁয়াজ নিয়ে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য নানা উক্তি করে আলোচিত হন। এর মধ্যে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল সবচেয়ে আলোচিত। এক সভায় তিনি পেঁয়াজ ছাড়া ২২ প্রকারের খাবার রান্নার কথা বলে দেশব্যাপী আলোচিত হন।
৫. নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব
গত ১৩ অক্টোবর নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ পান সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। ১ নভেম্বর তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত হন। ওই দিনই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ থেকে অবসরে যান মোহাম্মদ শফিউল আলম।
শফিউল আলমকে তিন বছরের জন্য ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।
নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হন। এরপর ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সচিব পদে এবং ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই জ্যেষ্ঠ সচিব পদে পদোন্নতি পান। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে।
৬. চার দফায় বিএনপি নেতারা সচিবালয়ে
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে গত এক বছরে চারবার যান বিএনপি নেতারা।
গত ৫ মার্চ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে।
একই দাবিতে ২৩ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি নেতারা। এবারও তাঁরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেন। বিএনপি নেতারা রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে কথা বলেন বিএনপি নেতারা। এবারও তাঁরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসহ সভা-সমাবেশের অনুমতি প্রদানের আবেদন জানান।
সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সচিবালয়ে গিয়ে বৈঠক করেন বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। এ বৈঠকে আট সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এ বৈঠকে নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতির বিষয়ে কথা বলেন।
৭. ডিসির ভিডিও ফাঁস, প্রশাসনে তোলপাড়
প্রশাসনের ২০১৯ সালের আলোচিত ঘটনাগুলোর অন্যতম ছিল জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের নারী কেলেঙ্কারির ভিডিও। গত ২৩ আগস্ট অত্যন্ত আপত্তিকর এ ভিডিওটি ফাঁস হয়। ২৪ মিনিটের এ ভিডিও প্রশাসনের মেরুদণ্ডে আঘাত করে। প্রশাসনের দক্ষ, সৎ, চরিত্রবান কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এ বছরই শুদ্ধাচার পদক পান। একজন অধীনস্থ নারী পিয়নের সঙ্গে এমন অনৈতিক কার্যকলাপসংবলিত এ ভিডিওটি নেট জগতে ভাইরাল হয়ে গেলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ঘটনার তীব্র সমালোচনায় মেতে ওঠেন।
এ ঘটনায় ২৫ আগস্ট ওএসডি করা হয় আহমেদ কবীরকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে এ ঘটনা প্রমাণ হলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয় তাঁকে।
৮. নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করে তথ্য মন্ত্রণালয়
সংবাদপত্রে নিযুক্ত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে গঠিত নবম ওয়েজবোর্ডের গেজেট গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে তথ্য মন্ত্রণালয়। এটিকে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ নামে অভিহিত করা হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত গেজেটে বলা হয়, গেজেট প্রকাশের তারিখ থেকে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ গেজেট কার্যকর হবে এবং পর্যায়ক্রমে অনুসরণযোগ্য। সরকার নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশসহ অনুমোদন করেছে।
গেজেট অনুযায়ী সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
গেজেটে আরো বলা হয়, অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদের ওপর প্রত্যেক শ্রেণিতে (ক-ঙ) প্রথম ৩ গ্রেডে ৮০ ভাগ এবং শেষ ৩ গ্রেডে ৮৫ ভাগ বাড়িয়ে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদের বেতনক্রম নির্ধারণে সুপারিশ করা হয়।
গেজেটে আরো বলা হয়, নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর সরকারের কাছে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ-২০১৮ উপস্থাপন করেন।
দেশের সব সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাগুলোর নিয়োজিত সাংবাদিক, প্রশাসনিক কর্মচারী ও প্রেস শ্রমিকদের জন্য এ রোয়েদাদ প্রযোজ্য হবে। নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ কার্যকর হওয়ার দিন থেকে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ রহিত হবে।
৯. ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ত্রাহি অবস্থা
ডেঙ্গু ও এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত বর্ষা মৌসুমে ত্রাহি অবস্থায় পড়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ওই সময় প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ওয়ার্ড খুলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে।
ঢাকায় প্রবেশের জায়গাগুলো—ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মোংলা, বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে জ্বরের রোগী পরীক্ষা করার নির্দেশনাও দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
একপর্যায়ে ঢাকা শহর থেকে জেলা পর্যায়েও এ রোগের বিস্তার ঘটে। ডেঙ্গুতে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুর পর দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঢাকার দুই মেয়রকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে বিদেশ থেকে ওষুধ এনে পরিস্থিত সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।
১০. ঢাকার ধুলোবালি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টেনশন
ঢাকা শহরের ধুলোবালি নিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে যায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। বিশ্বের এক নম্বর দূষিত নগরীর তালিকায় নাম ওঠার পরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টেনশন বেড়ে যায়।
এক বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীতে ধুলোবালির বর্তমান অবস্থায় আমরা উদ্বিগ্ন। বিশ্বের সব দেশেই কনস্ট্রাকশন কাজ হয়, কিন্তু বাংলাদেশের মতো এমন অবস্থা হয় না। বিদেশিরা আমাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়ে যায়।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে মানুষের বসবাস দুর্বিষহ হয়ে ওঠে ধুলোবালিতে। এর বাইরে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা আছে। এটা আর চলতে দেওয়া যায় না। আমরা উন্নত দেশ হতে যাচ্ছি। অনেক বিদেশি আসছে, তারা আমাদের সম্পর্কে খারাপ ইমপ্রেশন নিয়ে যায়। এ ছাড়া বায়ুদূষণের কারণে অনেক অসুখ-বিসুখও হচ্ছে।’
ঢাকার পরিবেশদূষণ রোধে বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ ও করণীয় ঠিক করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন করে যুগ্ম সচিব, রাজউকের প্রতিনিধি, সড়ক ও মহাসড়ক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ওয়াসার প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর দফায় দফায় বৈঠক করে ঢাকা শহরের পরিবেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারেনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।