প্রদীপ-লিয়াকতরা আবার রিমান্ডে

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ নিয়ে আসামিরা দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবেন।
আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ আসামিদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সাত আসামি হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল-মামুন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার। আজ বিকেলে কক্সবাজার র্যাব-১৫ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ‘রিমান্ডে থাকা আসামিরা সিনহা হত্যা মামলায় গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিদের আরো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।’
কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার আরো বলেন, ‘আজ দুপুর ২টায় ওসি প্রদীপ কুমার, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করে র্যাব। তখন র্যাবের পক্ষ থেকে সাত আসামির সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালতের বিচারক তাঁদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
র্যাব কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার দায়িত্ব নেওয়ার ১৪ দিনের মাথায় তদন্ত করতে গিয়ে পাওয়া তথ্য-উপাত্তগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আজ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চার আসামি যাঁরা জেলহাজতে আছেন তাঁদের চার দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁদের সুবিধামতো সময়ে রিমান্ডে নেওয়া হবে। আর আজ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখার জন্য আরো সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাঁদেরও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মোট সাত আসামিকে দ্বিতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।‘
প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দদুলাল রক্ষিতকে গত ১৮ আগস্ট কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে সাত দিনের জন্য রিমান্ডে নেয় র্যাব। অপর চার পুলিশ সদস্যও সাত দিনের রিমান্ড শেষে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।
এই সাত আসামির বাইরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্য সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহজাহান, কনস্টেবল রাজীব ও আবদুল্লাহকেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিনহা রাশেদ নিহতের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী কক্সবাজারের বাহারছড়া এলাকার মো. আয়াছ, মো. নুরুল আমিন, মো. নাজিমুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা।
তদন্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আসামিদের কখনো ব্যক্তিগতভাবে, আবার কখনো মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে।
পরে ৫ আগস্ট মেজর সিনহা হত্যার বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী (৩১), উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে শেষ দুজন ছাড়া বাকি সবাই জেলহাজতে রয়েছেন।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত হয়েছেন।