তিউনিসিয়ায় মানবপাচার : হাইকোর্ট বললেন, ‘আসামিদের জামিন দেওয়া ঠিক না’

অবৈধভাবে ইউরোপে পাঠানোর সময় ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিন আসামির জামিনের ওপর রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে করে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে এসব আসামিকে।
আদালত আজ বৃহস্পতিবার আদেশকালে বলেন, এসব আসামিকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না। এদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়া উচিত।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিনের ওপর রুল শুনানি শেষে এই রায় দেন।
এই তিন আসামি হলেন- শরীয়তপুরের বাসিন্দা মো. আক্কাস মাতুব্বর, সিলেটের বাসিন্দা এনামুল হক তালুকদার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো.আবদুর রাজ্জাক।
গত ১৪ অক্টোবর এই তিন আসামিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না- সেই মর্মে চার সপ্তাহের রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে দীর্ঘদিন রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত রুল খারিজ করে দেন।
আজ আদেশের সময় আদালত বলেন, ‘এসব আসামিকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না, এদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়া উচিত।’
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিরোজ আলম।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৯ মে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরের তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে ৮৫ থেকে ৯০ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে ৩৯ জন ছিল বাংলাদেশি। এ ছাড়া মিসরসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকও ছিল। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলের কাছে নৌকাটি ডুবে যায়।
এ ঘটনায় মফিজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে মানবপাচার এবং মানি লন্ডারিং আইনে চলতি বছরের ১৭ মে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। এ মামলায় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত বাংলাদেশিদের পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) মামলার দিনই ১৭ মে তিনজনকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এই তিনজন হলেন- শরীয়তপুরের বাসিন্দা মো. আক্কাস মাতুব্বর, সিলেটের বাসিন্দা এনামুল হক তালুকদার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবদুর রাজ্জাক।
সিলেটের জিন্দাবাজারে এনামুল হকের ‘ইয়াহিয়া ওভারসিজ’ নামের একটি এজেন্সি আছে। এ এজেন্সির মাধ্যমে গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এভাবে মানবপাচার করে আসছেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠানের দালাল হিসেবে কাজ করেন আবদুর রাজ্জাক।
ভূমধ্যসাগরের নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ সিলেট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ ও নোয়াখালীর বাসিন্দা। তাঁরা কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইউরোপে যাওয়ার জন্য প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের পরিবারের লোকজন শরীয়তপুরের নড়িয়া ও সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় আরো দুটি মামলা করেছেন। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং তাঁদের মূলোৎপাটনের জন্য র্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।