কিশোরগঞ্জে বিদ্যুতের লাইনের নিচে স্থাপনা, ঘটছে দুর্ঘটনা

নিরাপত্তার বিষয়টি আগ্রাহ্য করে জাতীয় সঞ্চালন লাইনের নিচে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নিয়মিত ঘটছে প্রাণহানি ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি এ রকম একটি দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়ে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যান কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ইলেক্ট্রিশিয়ান জাকারিয়া আহমেদ বকুল।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, সদর উপজেলার কাঁটাবাড়িয়া এলাকায় বিশ্বরোডের মোড়ের কাছে কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সেলিনা খানম সুপার মার্কেটের দ্বিতীয়তলা নির্মাণের কাজ চলছে। ভবনটির মালিক বর্তমানে সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে কর্মরত রেজাউল করিম বাবলু। এই ভবনের দ্বিতীয়তলার ছাদের ঠিক মাঝাখান দিয়ে মাত্র তিন থেকে চার ফুট উপর দিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে পল্লীবিদ্যুতের ৩৩ হাজার ভোল্টের সঞ্চালন লাইন গেছে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. মনির উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘প্রচলিত বিদ্যুৎ আইনে জাতীয় সঞ্চালন লাইনের নিচে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ অবৈধ হলেও বিপজ্জনক জানার পরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ তা মানছে না। এ ক্ষেত্রে জানমালের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে জমির মালিকদের সচেতন হতে হবে।’
তবে ভবনটির মালিক রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘প্রচলিত বিদ্যুৎ আইন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তাই আমার জমিতে মার্কেট নির্মাণ করেছি। মার্কেট নির্মাণকাজের শুরু থেকে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে আমাকে মৌখিকভাবে বা লিখিত নোটিশ দিয়ে কেউ বারণ করেনি।’
স্থানীয় লতিবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ঠিকমত নজরদারি করলে এবং যথাসময়ে স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিলে হয়তো এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না। তাই পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিকে আরো সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে। তা না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আনিসুজ্জামান খোকন বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। আগেও অনেকে হতাহত হয়েছেন। এখনই যদি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি আরো তৎপর না হয় এবং সরকার এ ব্যাপারে শাস্তির বিধান না করে তবে বকুল ভাইয়ের মতো আরো অনেকেই নিহত হতেই থাকবে।’
কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সাবেক পরিচালক বলেন, ‘জানমালের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সারকারকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আইন করতে হবে এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীকে ও গাফিলতির জন্য পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিকে শাস্তি প্রদানের আইন প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না।’
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত বকুলের ছোট ভাই সাংবাদিক এ জে এম সালেহ বাবুল বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণমূলক প্রতিকার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দাবি করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’