এনইসিতে ২ লাখ সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সভায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ৯ হাজার ৬১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা সংশোধিত এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে।
আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সভায় যুক্ত হন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের এসব তথ্য তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরেও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, কোভিড-১৯ মোকাবিলা, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়ন ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
মূল এডিপি হতে সংশোধিত এডিপি অভ্যন্তরীণ উৎসে ৯ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক উৎসে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ সাকুল্যে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা হ্রাস পেয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশনের ৯ হাজার ৬১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার এডিপির আকার অপরিবর্তিত রয়েছে। যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থায়ন ৬ হাজার ৩২৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়ন ৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এতে স্বায়ত্তশাসিত বা করপোরেশনের প্রকল্পসহ এডিপির সর্বমোট আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
মন্ত্রী বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প ১৭৭০টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১৫২০টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪২টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ১০৮টি প্রকল্প।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, শিক্ষা খাতে ২০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৫ হাজার ৫২০ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। কৃষি খাতে ৭ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। এ ১০টি খাতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ
স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগে ২৮ হাজার ২৯২ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ২২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১৫ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ৯ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ৫ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি প্রকল্প
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা, মাতারবাড়ি ২৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) ৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত) ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধিত) ২ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ও ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প-সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণে দুই হাজার ১৫০ কোটি টাকা।