‘রক্তমূল্য’ কি বাঁচাতে পারবে ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সকে!

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়া। আগামী ১৬ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নিমিষার পরিবার ও সমর্থকরা ‘রক্তমূল্য’ হিসেবে বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে ক্ষমা লাভের শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ভুক্তভোগীর পরিবারের সম্মতি। পরিবার কি প্রায় ১২ কোটি টাকার রক্তমূল্য গ্রহণ করবেন? নাকি মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেতে হবে এই ভারতীয় নার্সকে? খবর বিবিসির।
নিমিষা প্রিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে তার প্রাক্তন ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল আবদো মাহদিকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। মাহদির খণ্ডবিখণ্ড দেহ একটি পানির ট্যাঙ্কে পাওয়া গিয়েছিল।এরপর নিমিষাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩৪ বছর বয়সী নিমিষা বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী সানার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।
অভিযোগ ছিল, নিমিষা অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুমের ওষুধ দিয়ে মাহদিকে হত্যা করেছেন। পরে তার দেহ খণ্ডবিখণ্ড করেছেন। যদিও নিমিষা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আদালতে তার আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন, মাহদি তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। তার সব টাকা কেড়ে নিয়েছিলেন, পাসপোর্ট জব্দ করেছিলেন। এমনকি বন্দুক দিয়ে হুমকিও দিয়েছিলেন। নিমিষা শুধু তার পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার জন্য মাহদিকে অজ্ঞান করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভুলবশত ওষুধের মাত্রা বেশি পড়ে গিয়েছিল।
২০২০ সালে একটি স্থানীয় আদালত নিমিষাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তার পরিবার ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করলেও ২০২৩ সালে তাদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। চলতি বছরের শুরুতে হুতি বিদ্রোহীদের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন দেন।

ইয়েমেনের ইসলামিক বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী ভুক্তভোগীর পরিবারকে ‘দিয়াহ’ বা রক্তমূল্য প্রদান করে ক্ষমা লাভ করার একটি শেষ সুযোগ থাকে। নিমিষার আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকরা মাহদির পরিবারকে ১ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা) রক্তমূল্য হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। 'সেভ নিমিষা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল' নামে একটি গ্রুপ ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করছে।
নিমিষার মা কেরালার একজন দরিদ্র গৃহকর্মী। তিনি মেয়েকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করতে ইয়েমেনে অবস্থান করছেন। ইয়েমেন-ভিত্তিক সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোমকে মাহদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
'সেভ নিমিষা প্রিয়া কাউন্সিলের’ সদস্য ও সমাজকর্মী বাবু জন বিবিসিকে বলেন, প্রসিকিউশনের মহাপরিচালক কারাকর্তাদের কাছে মৃত্যুদণ্ডের তারিখ জানিয়েছেন। আমরা এখনও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিবারকে ক্ষমার জন্য রাজি হতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এখনও বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং নিমিষার জীবন বাঁচাতে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা চলছে। এখন দেখার বিষয়, রক্তমূল্যের বিনিময়ে নিমিষা প্রিয়ার জীবন রক্ষা পায় কিনা।