ব্রিটিশদের ‘চুরি করা’ কোহিনুর ফেরত চায় ভারত

একসময় পৃথিবীর সবচাইতে ‘বড় হীরা’ হিসেবে পরিচিত ছিল এটিই। সময়ের আবর্তে খেতাব হারালেও ঐতিহাসিক হীরাটির বর্তমান বাজারমূল্য ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।
ঐতিহাসিক সূত্র উল্লেখ করে ভারতের দাবি, পনেরশ শতকে অন্ধ্রপ্রদেশের গোলাকুণ্ডা কয়লা খনির কল্লুর এলাকা থেকে এই হীরাটি আবিষ্কৃত হয়। খনিশ্রমিকদের বিরল এই আবিষ্কারের পর অন্ধ্রপ্রদেশেরই একটি মন্দিরের দেবির গলায় ছিল এই হীরাটি।
ভারতে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ার পর ওই মন্দির থেকে কোহিনূর চুরি হয়ে যায়। এরপর ১৮৫১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মহারাণী ভিক্টোরিয়াকে হিরেটি উপহার দেয়। ধারণা করা হয়, ভারতের মন্দির থেকে অনেক সম্পদের সঙ্গে কোহিনুর হিরেটিও লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশশাসক।
সম্প্রতি ভারতবর্ষ থেকে ‘চুরি করা’ প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা মূল্যের হীরার কোহিনূর (মুকুট) ফেরতের দাবি জানিয়েছে ভারতীয় একটি দল। বলিউড তারকা ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত দলটি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তা ফিরিয়ে আনতে আইনি লড়াই শুরু করতে যাচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, কোহিনুর শোভিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘হীরার মুকুট’ এর নামে নামকরণ করা ‘মাউন্টেন অব লাইট’ দলটি ইতিমধ্যে লন্ডন হাইকোর্টে মামলা দায়েরের জন্য আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে।
‘মাউন্টেন অব লাইট’-এর পক্ষের আইনজীবী দলটির দাবি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ১০৫ ক্যারেট হীরার ওই কোহিনূরটি চুরি করে নিয়ে যায় ব্রিটিশ শাসকরা। এ কারণে তারা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ওই কোহিনূরটি ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আইনজীবীদের দলটি আরো দাবি করেন, কোন দেশের সংস্কৃতির অংশ চুরি করে নিয়ে যাওয়া যুক্তরাজ্যের আইন সমর্থন করে না। সে কারণেই দেশটিতে প্রচলিত ‘সাংস্কৃতিক বস্তু ফেরত দেওয়ার আইন’ অনুযায়ী কোহিনূর ফেরত চাওয়া হবে। আর এ মামলায় জিতে কোহিনুর ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ‘মাউন্টেন অব লাইট’ দল।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, কয়লাখনি থেকে উত্তোলনের পর হীরাটি ৭৯৩ ক্যারেট ছিল। পরে তা কেটে ১০৫ ক্যারেট দিয়ে রাণীর মাথার মুকুট তৈরি করা হয়। ১৯৩৭ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জের স্ত্রী রাণী মাদার কোহিনূরটি পরেন। ১৯৫৩ সালে বর্তমান রাণী এলিজাবেথকে শাসনক্ষমতায় আসার পর থেকে দুর্লভ এই হীরাটি তাঁর মুকুটের শোভা বাড়িয়েছে।
মাউন্টেন অব লাইটের সদস্য ডেভিড ডি সুজা বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনামলে তখনকার শাসকরা ভারতের সম্পদ চুরি ও চেতনা ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এই ঐতিহাসিক হীরাটি চুরি করা হয়।’
বলিউড তারকা ভূমিকা সিংয়ের দাবি, ‘কোহিনূর শুধু ১০৫ ক্যারেট হীরাই নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। অবশ্যই এটা ফেরত দিতে হবে।’
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বলিউড তারকা ও শিল্পপতিদের এই জোটবদ্ধ মামলা অস্বস্তি বাড়াতে পারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কারণ চলতি সপ্তাহেই মোদিকে বাকিংহাম প্যালেসে নিমন্ত্রণ করছেন রানি এলিজাবেথ। যদিও ব্রিটেনের রাজপরিবারের অফিস সূত্রের খবর, মোদি-এলিজাবেথ বৈঠকে কোহিনুর প্রসঙ্গকে রাখা হয়নি। তবে এই সময়ে রাজমুকুটের সবচাইতে দামি রত্নটি নিয়ে ‘টানাটানি’ রাণী কীভাবে দেখছেন সেটিই এই মুহূর্তে ‘লাখ টাকার প্রশ্ন’।