জার্মানির কাগজ শিল্পের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সবুজ জ্বালানি

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে জার্মানির দুটি কাগজকল বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু হামবুর্গের কাছে একটি কাগজকল বায়োমাস, সৌরশক্তি এবং বায়ুশক্তি ব্যবহার করে জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করছে। বন্ধ হওয়া কাগজকলের একটি ‘মেলডর্ফ’৷ সেখানে ১৩০ জন কর্মী কাজ করতেন। তাদের আর চাকরি নেই - তাদের মধ্যে একজন রল্ফ স্নাইডার।
তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই আপনার উপর প্রভাব ফেলে। এটা সত্যিই একটা বড় ধাক্কা। ২৯ বছর চাকরি করার পর দেউলিয়া প্রশাসকের দেওয়া চাকরিচ্যুতির কাগজে সই করার মাধ্যমে সব শেষ হয়ে যাবে।’
কাগজকলটি বন্ধের মূল কারণ সম্ভবত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়া। নির্দিষ্ট করে বললে দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক উলরিকে লেম।
ঘাস থেকে কাগজ তৈরির মাধ্যমে একটি নতুন ও টেকসই পণ্যকে অবলম্বন করে কাগজকলটি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিল। মেলডর্ফ কাগজকল এর এমডি উলরিকে লেম বলেন,‘প্রথমে পণ্যটি বেশ ভালো সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু পরে চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ে। হয়ত কাগজ শিল্প এখনও বিকল্প ফাইবারের জন্য প্রস্তুত নয়। অথবা হয়ত আমাদের আরেকটু সময় প্রয়োজন ছিল।’
কাগজকলের জন্য একজন বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দেউলিয়া বিষয়ক প্রশাসক ইওয়াখিম বয়ক। কিন্তু সফল হননি। তিনি বলেন ‘দিনের শেষ এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে কাগজকলটি তার খরচ মেটাতে সক্ষম নয়। এ ছাড়া আমরা এমন কোনো বিনিয়োগকারী খুঁজে পাইনি যিনি ঝুঁকি নিতে এবং শেষ পর্যন্ত কাগজকলটিকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক।’
মেলডর্ফ কাগজকল থেকে আধ ঘণ্টা গাড়ি চালালে আরেকটি কাগজকল পাওয়া যায়। কাগজকলের সব মেশিন এখনো চলছে৷ বিদ্যুতের উচ্চ দাম সেখানে কোনো সমস্যা নয়৷ কারণ, কোম্পানির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যা বিদ্যুৎ এবং তাপ উৎপাদন করে। ব্যয়বহুল গ্যাস ছাড়াই সেটি করা হচ্ছে।
স্টাইনবাইস এনার্গির এমডি ইয়র্গ ভার্নকে বলেন, ‘আমরা যে জ্বালানি ব্যবহার করি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য: ফেলে দেওয়া কাগজ প্রক্রিয়াকরণ থেকে পাওয়া উপকরণ, যা বিভিন্ন মূল্যের হয়ে থাকে৷ তাই জ্বালানি মূল্যের ওঠানামা আমাদের খুব একটা খারাপভাবে প্রভাবিত করে না।’
স্টাইনবাইস-এ বায়ু, সৌর এবং জৈবগ্যাস উৎপাদনের সুবিধাও আছে। এ ছাড়া সম্প্রতি এটি দ্বিতীয় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র কিনেছে, যেটি কাঠ এবং কাগজের বর্জ্য পোড়ায়। এমন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকায় স্টাইনবাইস এমনকি জ্বালানি বিক্রিও করতে সক্ষম, এবং আন্তর্জাতিকভাবে এটি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।
ভার্নকে বলেন, ‘গ্যাসের দাম কম থাকলেও আমরা প্রতিযোগিতামূলক থাকি। এই প্ল্যান্টটি ২০১০ সাল থেকে চালু আছে। এমনকি যখন গ্যাসের দাম প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা ২ থেকে ৩ সেন্ট ছিল, তখনও আমরা প্রতিযোগীদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম।’
কোম্পানিটি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি টেকসই পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে৷ সেটি এখন পর্যন্ত সফল প্রমাণিত হয়েছে - শুধু জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নয়, উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রেও: সব পণ্য ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত কাগজ দিয়ে তৈরি এবং চাহিদা ক্রমে বাড়ছে।
স্টাইনবাইস পাপিয়ার এর মার্ক গেবাউয়ার বলেন, ‘‘বর্তমানে অনেক কোম্পানি পুনর্ব্যবহৃত কাগজ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। আমাদের জন্য এর অর্থ, আয় বৃদ্ধি। সাধারণভাবে বলতে গেলে, পুনর্ব্যবহৃত কাগজ আর আগের মতো সস্তা নেই, এগুলোর ভাবমূর্তিও এখন ভালো। বরং এই কাগজকেই এখন উন্নত পণ্য হিসেবে দেখার ট্রেন্ড শুরু হয়েছে।’
বন্ধ হতে চলা কাগজকলে ফেরা যাক। সেখানকার ১৩০ কর্মীর মধ্যে ৪০ জন নতুন চাকরি পেয়েছেন- তাদের মধ্যে কিছু স্টাইনবাইস-এও কাজ পেয়েছেন। যন্ত্রপাতিগুলো সব বিক্রি করা হবে- সম্ভবত এশিয়ার নতুন মালিকদের কাছে।