কাশির সঙ্গে রক্ত যায় কেন?

বিভিন্ন কারণে কাশির সঙ্গে রক্ত যায়। সাধারণ বা জটিল যে কারণেই হোক, কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৬৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়ার অনেক কারণ থাকে। অনেক সময় খুব সাধারণ কারণেও রক্ত যেতে পারে। আবার অনেক সময় জটিল কারণেও রক্ত যায়। আপনি শুরুতে একটু বলুন, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়ার প্রধানতম কারণগুলো কী?
উত্তর : কাশির সঙ্গে যখনই রক্ত যায়, মানুষ খুব ভীত হয়ে পড়ে। মানুষের মনের মধ্যে একটি প্যানিক সৃষ্টি হয়। মানুষ মনে করে আমি হয়তো একটি মারাত্মক রোগে ভুগছি। কাশির সঙ্গে রক্ত গেলেই যে বিষয়টি মারাত্মক, তা নয়। অনেক সাধারণ রোগের ক্ষেত্রেও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। আর অনেক মারাত্মক রোগের ক্ষেত্রেও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। যেমন : সাধারণ রোগগুলোর মধ্যে আছে একিউট ও ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস। এটা মারাত্মক রোগ নয়। আর সেখানে অনেক রক্ত যাবে না।
টিউবার কুলোসিস বা পালমোনারি টিউবার কুলোসিস, যক্ষ্মা। যক্ষ্মা হলে কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এরপর নিউমোনিয়া। মানুষের যদি নিউমোনিয়া হয়, তখনো কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। বুকের মধ্যে যদি ঘা হয়, তাহলেও সেখানে রক্ত যেতে পারে। এরপর ব্রঙ্কিয়াকটেসিস নামে একটি রোগ আছে। এখানে প্রচুর রক্ত যায়। পালমোনারি এসপারজিলোসিস নামে একটি রোগ আছে, সেখানেও রক্ত যেতে পারে। ফুসফুসের মধ্যে ব্রঙ্কিজোনিক কারসিনোমা, ফুসফুস ক্যানসার যেটা, এখানে অনেক রক্ত যেতে পারে। এ ছাড়া অনেকগুলো কারণ আছে, মানুষের যদি কোনো রক্তসম্পর্কীয় সমস্যা থাকে, তাহলেও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। হার্টে যদি মাট্রিয়াল স্টেনোসিস থাকে তাহলেও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
এ ছাড়া আরো অনেক রোগ আছে যেগুলো হলে কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এমনকি খুব সাধারণ সর্দি-কাশি হলেও অনেক সময় কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। কাশির সঙ্গে যে রক্ত যায় একে আমরা বলি হেমোপটাইসিস। অনেক সময় পেট থেকে বমির মাধ্যমে রক্ত আসতে পারে। যেমন : গ্যাসট্রিক আলসার বা ডিওড্রেন আসলার হলে, অনেক সময় পেট থেকে বমির মাধ্যমে রক্ত আসতে পারে। একেও অনেকে মনে করে হেমোপটাইসিস। তবে এটি হেমোপটাইসিস নয়। আবার পেটের কিছু রোগ আছে, যেখান থেকে তখন বমির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এগুলোকেও মানুষ অনেক সময় হেমোপটাইসিস বা কাশির সঙ্গে রক্ত মনে করে। আসলে তা নয়।
প্রশ্ন : রক্ত পড়ার ধরন দেখে কি বোঝার কোনো উপায় থাকে, এটি খুব জটিল নাকি সাধারণ রোগ?
উত্তর : অল্প অল্প রক্ত যখন যায় তখন ধারণা করতে হয়, এটি হয়তো একিউট ব্রঙ্কাইটিস বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস। আবার ফুসফুসের ক্যানসার যেটা সেটা কিন্তু খুব ক্ষতিকর। ফুসফুসের ক্যানসারে কিন্তু হঠাৎ করে অনেকগুলো রক্ত যায় না। অল্প অল্প রক্ত যাবে, আবার হঠাৎ করে একদিন বেশি যেতে পারে।
আবার ব্রঙ্কিয়াকটেসিস অনেক রক্ত যাবে। আবার কিছু রোগ আছে গুড পাসস সিনড্রম, এতে কিডনির সঙ্গে একটি রোগের সম্পর্ক রয়েছে, অটো ইমিউন রোগ, সেখানে প্রচুর রক্ত যেতে পারে। আর রক্তে যদি জমাট বাঁধার কোনো সমস্যা থাকে, সেখান থেকেও যেতে পারে। তবে যত সাধারণ বা জটিল হোক, চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অবহেলা করা যাবে না।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে আসার পর কীভাবে আপনারা রোগ নির্ণয় করেন? কীভাবে বোঝেন কী কারণে হচ্ছে?
উত্তর : যদি টিউবার কুলোসিস হয়, তাহলে কাশির সঙ্গে যে রক্ত গেল, একে মাইক্রোস্কোপে তিনটি নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করি। আমরা যদি টিবির জীবাণু পাই, তাহলে তো নিশ্চিত হয়ে গেল। আর যদি সেটি না হয় আমরা বুকের এক্সরে করি। এক্সরে দেখেও আমরা টিউবার কুলোসিস নির্ণয় করতে পারি।
অনেক সময় দেখা যায়, হেমোপটাইসিস হলো, কাশির সঙ্গে রক্ত গেল, এক্সরে করে দেখা গেল কিছু নেই। তখনো তার টিউবার কুলোসিস হতে পারে। যক্ষ্মার যে মূল পয়েন্টটা সেটি যদি বুকের পাঁজরের হাড়ের পেছনে হয়, তাহলে এক্সরেতে অনেক সময় নাও আসতে পারে।
আবার ফুসফুসের কিছু প্যারামিটার আছে। সেগুলো সব এক্সরেতে আসে না। সে জন্য সেখানে সিটি স্ক্যান করতে হয়। সিটি স্ক্যান করলে অবশ্যই ধরা পড়বে। ব্রঙ্কজনিক কারসিনোমার ক্ষেত্রেও এ রকম এক্সরে করলে, সিটি স্ক্যান এবং আরো কিছু পরীক্ষা করলে রোগটি ধরা পড়বে। স্পুটাম পরীক্ষা করলে লাংস এপসেস ধরা পড়বে।
প্রশ্ন : ফুসফুসের যক্ষ্মার বেলায় ভালো হওয়ার সম্ভবনা কতটা?
উত্তর : আগে বলা হতো, ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা’। এখন বলা হয়, ‘যার হয় যক্ষ্মা, তার আছে রক্ষা’। ছয় মাস থেকে আট মাস যদি চিকিৎসা করে, তাহলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভালো হবে।
প্রশ্ন : কিন্তু ক্যানসারের বেলায়?
উত্তর : ফুসফুসের ক্যানসার খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফুসফুসের ক্যানসার পরে ধরা পড়ে। এতে চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়। ভালো হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।