কড়া নিরাপত্তায় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ২১টি হলের মোট ২২৪টি বুথে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ৩৩ বছর পর আজ জাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পারছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১২টি গেট এবং ক্যাম্পাসে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাতটি প্যানেল
জাকসু নির্বাচনে মোট সাতটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে চারটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও তিনটি আংশিক প্যানেল রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলগুলো হলো ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির–সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম। আংশিক প্যানেল দিয়েছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ এবং ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ। এ ছাড়া অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।
ক্যাম্পাসজুড়ে কড়া নিরাপত্তা
জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১২টি গেট এবং ক্যাম্পাসে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুর থেকে নির্বাচনের দিন আজ পর্যন্ত পোশাকে ও সাদা পোশাকে প্রায় এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করছেন এবং নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ভোটকেন্দ্র ও হলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া দুজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি হলের ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল ও ১১টি ছাত্র হল। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং অফিসার ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
৪০টি ব্যালটে ভোট, বড় স্ক্রিনে পর্যবেক্ষণ
কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ভোটাররা মোট ৪০টি ব্যালটে ভোট দেবেন। বিশেষ ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হবে। এ ছাড়া সিনেট হলে একটি বড় স্ক্রিনে সব হলের ভোট পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রতি ঘণ্টায় ভোটের ফলাফল জানানোর জন্য ক্যাম্পাসের কয়েকটি পয়েন্টে মনিটর থাকবে।
এবারের জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন পদে মোট ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ছয়জন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন
জাকসুর মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ৬ হাজার ১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদেরও নির্বাচন হবে।
সহসভাপতি (ভিপি) পদে ভোট প্রার্থী ৯ জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
একেকটি হলে পদসংখ্যা ১৫। ২১টি হল সংসদে মোট পদ ৩১৫টি। এতে ৪৭৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী নেই। একজন করে প্রার্থী রয়েছে ৬৭টি পদে। সে হিসেবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট হবে।
নির্বাচনে মোট ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০টি। ভোটগ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহাকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

৫৩ বছরে মাত্র ৯ বার নির্বাচন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ৫৪ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ সালে জাকসু প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ওই বছরই নির্বাচন হয়। প্রথম নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন।
১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন হয়। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। তারপর আর হয়নি।