ডাকসুর দায়িত্ব কার কাঁধে যাচ্ছে জানা যাবে কাল

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে প্রথম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নানা আলোচনা-সমালোচনা ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে আগামীকালের এ নির্বাচন পুরো দেশজুড়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এ নির্বাচনকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে বিভিন্ন হিসেব নিকেশ ও বিচার বিশ্লেষণ। তবে গত ১৫ দিনে নানা শঙ্কা কাটিয়ে সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাবি প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মাত্র আটবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরধ্যে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে সকাল আটটা থেকে। চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। হলের বাইরে মোট আটটি কেন্দ্রে চলবে ভোট গ্রহণ।
নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে সব কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। আগামীকাল ভোটাররা আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোট প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন এক হাজার ৩৫ জন। সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে।
এদিকে অন্যবারের তুলনায় এবার ডাকসুতে ব্যালটের আকার বেড়েছে। এবার ডাকসুতে থাকছে পাঁচ পৃষ্ঠার ব্যালট। আর হল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। এ ভোট দিতে হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে।
ঢাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো আশঙ্কা নেই। উপাচার্য জানান, এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১১ মাসের ব্যাপক প্রস্তুতির পর সব অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা শেষভাগে চলে এসেছি। আগামীকাল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন। তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে ৮১০টি বুথ থাকবে এবং প্রায় ৪০ হাজার ভোটার ভোট দেবেন। প্রথমবারের মতো হল থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রীয়ভাবে আটটি কেন্দ্রে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষিত পোলিং কর্মকর্তা রাখা হয়েছে।
কঠোর নিরাপত্তা বলয়
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ক্যাম্পাস এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দুই হাজার ৯৬ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। অবাঞ্ছিত কোনো ব্যক্তিকে ক্যাম্পাসে দেখা গেলে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে।
ভুয়া আইডি কার্ড যাতে তৈরি না হয় সে বিষয়ে পুলিশ কঠোর তৎপর রয়েছে। সাইবার বুলিং বন্ধেও কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক মাস ধরে সমন্বয় করে এ নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে, নিরাপত্তার মধ্যে থেকেই নির্বাচন হবে, কোনো ধরনের ঝামেলার আশঙ্কা নেই।
আলোচিত প্যানেল
আবিদ-হামিমের নেতৃত্বে ছাত্রদলের প্যানেল
এই প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবিদুল ইসলাম খানকে সহ-সভাপতি (ভিপি), কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিমকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী করা হয়েছে।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে আরিফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে এহসানুল ইসলাম, কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আবু হায়াত মো. জুলফিকার জিসান, ক্রীড়া সম্পাদক পদে চিম চিম্যা চাকমা, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে সাইফ উল্লাহ সাইফ, সমাজসেবা সম্পাদক পদে সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে আরকানুল ইসলাম রূপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসাইন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান মুন্নাকে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রদল।
এ ছাড়া প্যানেলে সদস্য পদে জারিফ রহমান, মাহমুদুল হাসান, নাহিদ হাসান, হাসিবুর রহমান সাকিব, শামীম রানা, ইয়াসিন আরাফাত, মুনইম হাসান অরূপ, রঞ্জন রায়, সোয়াইব ইসলাম ওমি, মেহেরুন্নেসা কেয়া, ইবনু আহমেদ, শামসুল হক আনান, নিত্যানন্দ পালকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
ডাকসুতে ২৮টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বীর সম্মানে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদটি শূন্য রেখে তাকে সমর্থন দিয়েছে ছাত্রদল।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল
সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে আবু সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দিন খান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ইকবাল হায়দার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক খান জসিম, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ, সমাজসেবা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মুয়াজ, ক্রীড়া সম্পাদক আরমান হোসাইন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতেমা তাসনিম জুমা, কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নুরুল ইসলাম সাব্বির, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে এম এম আল মিনহাজ, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক সাখাওয়াত জাকারিয়া, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খান, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ ছাড়া ১৩টি কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সর্ব মিত্র চাকমা, ইমরান হোসাইন, বেলাল হোসেন অপু, জয়েন উদ্দিন সরকার তন্ময়, মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ, মাজহারুল ইসলাম মুজাহিদ, রাইসুল ইসলাম, সাবিকুন নাহার তামান্না, শাহিউর রহমান, আফসানা আক্তার, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রায়হান উদ্দিন ও আনাস বিন মনির মনোনয়ন পেয়েছেন।
কাদের-বাকেরের নেতৃত্বে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল
এই প্যানেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দুই সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে আবু বাকের মজুমদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কাদের বাগছাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বাকের বাগছাসের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক। এছাড়া এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে আশরেফা খাতুনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি বাগছাসের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নাহিয়ান ফারুক, সমাজসেবা সম্পাদক পদে মহির আলম, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে মো. হাসিবুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সাকিব, ক্রীড়া সম্পাদক পদে আল আমিন সরকার, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে আনিকা তাহসিনা, কমনরুম ও ক্যাফেটরিয়া সম্পাদক পদে মিতু আক্তার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আহাদ বিন ইসলাম শোয়েব, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে সাব্বির আহমেদ, ক্যারিয়ার ও উন্নয়ন সম্পাদক পদে রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে মো. ঈসমাইল হোসেন রুদ্রকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জুলাই আহত সানজিদা আহমেদ তন্বীর প্রতি সমর্থন দিয়ে পদটি ছেড়ে দেয় বাগছাস।
অন্যদিকে ১৩টি সদস্য পদে মনোনীতরা হলেন—মো. মাসউদুজ্জামান, ফেরদৌস আইয়াম, ইসমাঈল, তাপসী রাবেয়া, মো. আরমানুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, রিফতি আল জাবেদ, আশরাফ অনিক, রওনক জাহান, মাহফুজা নওয়ার নওরীন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আরিফুর রহমান, ফেরদৌস আলম।
উমামা-সাদীর নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যে’র পূর্ণাঙ্গ প্যানেল
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেত্রী উমামা ফাতেমা ডাকসুতে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে লড়বেন। যেখানে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হিসেবে মনোনীত প্রার্থী হলেন আল সাদী ভুঁইয়া।
প্যানেলের অন্যান্য পদে রয়েছেন সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) জাহেদ আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক, নূমান আহমাদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: মমিনুল ইসলাম (বিধান), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক : নাফিজ বাশার আলিফ, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক : সুমী চাকমা, সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক: অনিদ হাসান, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক : সিয়াম ফেরদৌস ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক : মো. সাদিকুজ্জামান সরকার, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক : মো. রাফিজ খান, সমাজসেবা সম্পাদক: তানভীর সামাদ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক : রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক : ইসরাত জাহান নিঝুম, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক : নুসরাত জাহান নিসু।
এছাড়া সদস্য পদে আছেন নওরীন সুলতানা তমা, আবিদ আব্দুলাহ, ববি বিশ্বাস, মো. শাকিল, মো. হাসান জুবায়ের (তুফান), আব্দুল্লাহ আল মুবিন (রিফাত), অর্ক বড়ুয়া, আবির হাসান, নেওয়াজ শরীফ আরমান, মো. মুকতারুল ইসলাম (রিদয়), হাসিবুর রহমান, রাফিউল হক রাফি, মো. সজিব হোসেন, সাদেকুর রহমান সানি।
ইমি ও বসুর নেতৃত্বে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’
শেখ তাসনিম আফরোজকে (ইমি) সহ-সভাপতি (ভিপি), ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একাংশের সভাপতি মেঘমল্লার বসুকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেলকে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী করা হয়েছে।
প্যানেলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে মোজাম্মেল হক, কমনরুম রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে নূজিয়া হাসিন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে আকাশ আলী, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে লিটন ত্রিপুরা, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে নিনাদ খান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে নাঈম উদ্দীন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ফারিয়া মতিন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মালিহা তাবাসসুম, সমাজসেবা সম্পাদক পদে আবু মুজাহিদ আকাশ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে শেখ তাসনিভা সৃষ্টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাক, গবেষণা ও প্রকাশনা পদে আলমগীর হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মো. তাফসিরুল্লাহ, রাজেকুজ্জামান জুয়েল, ওয়াকার রহমান সৌরভ, মোহাম্মদ মুস্তাকিম, মিশকাতুল মাশিয়াত, আতিকা আনজুম, পৃথিং মারমা, ইসরাত জাহান ইমু, আনিয়া ফাহমিন, রাহনুমা আহমেদ, সাজিদ উল ইসলাম ও হেমা চাকমাকে সদস্যপদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
ডাকসু নিয়ে আইনি লড়াই
চব্বিশের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই দাবি ওঠে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের। যেখানে সবার আগে ভোট হতে যাচ্ছে ডাকসুতে। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নানা রকম বাধার মুখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচন হবে কিনা তা গড়ায় সুপ্রিমকোর্টে। এক প্রার্থীর রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। তবে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়। পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ নির্বাচন নিয়ে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রাখে। ফলে নির্ধারিত সময়েই হতে যাচ্ছে ৩৮তম ডাকসু নির্বাচন।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি বা ভিপি পদে মোট প্রার্থী ৪৫ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ জন। সাধারণ সম্পাদক বা জিএস পদে প্রার্থী ১৯ জন, সেখানে ছাত্রী মাত্র একজন। ভোটের মাঠে দেখা গেছে, ভিপি হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন ‘ছাত্রদলের’ প্যানেলের প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের আবু সাদিক কায়েম, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস)’ আব্দুল কাদের, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের উমামা ফাতেমা এবং বাম জোট ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের শেখ তাসনিম আফরোজকে (ইমি)।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হিসেবে আলোচনায় ও ভোটারদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের এস এম ফরহাদ, প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু, বাগছাসের আবু বাকের মজুমদার, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের আল সাদী ভুঁইয়া।
তবে এসব প্যানেলের বাহিরেও আলোচনায় রয়েছেনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়া ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বী। গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা তন্বীর সম্মানে ওই পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ ছয়টি প্যানেল।
আলোচনায় রয়েছেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়াই করা জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানোৎম খান জসীম এবং একই প্যানেলের সদস্য পদে সর্ব মিত্র চাকমা। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদও। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন তিনি।
এক নজরে ডাকসু নির্বাচনের কেন্দ্র এবং ভোটগ্রহণ কক্ষসমূহ
১. কার্জন হল কেন্দ্র—ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল (কার্জন হল পরীক্ষা কেন্দ্র), অমর একুশে হল (দ্বিতীয় তলার গ্যালারি), ফজলুল হক মুসলিম হল (কার্জন হল পরীক্ষা কেন্দ্র)।
২. শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র—জগন্নাথ হল (ইনডোর গেমস রুম), শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল (ইনস্ট্রুমেন্ট রুম), সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (ইনডোর গেমস রুম)।
৩. ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র—রোকেয়া হল (ক্যাফেটেরিয়া, গেমস রুম)।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্র—বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল (মেঘনা গেমস রুম ও পদ্মা গেমস রুম), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল (শিক্ষক লাউঞ্জ ও সুরমা গেমস রুম)।
৫. সিনেট ভবন কেন্দ্র—স্যার এ এফ রহমান হল (সেমিনার রুম), হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল (অ্যালামনাই ফ্লোর), বিজয় একাত্তর হল (ডাইনিং রুম)।
৬. উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ—সূর্যসেন হল (পশ্চিম পাশের ২য় তলার ২০৩, ২০৪ ও ২০৫ নং কক্ষ), মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল (নিচতলার সেমিনার কক্ষ), শেখ মুজিবুর রহমান হল (মাঝখানের সিঁড়ির ২য় তলায়), কবি জসীম উদদীন হল (মাঝখানের সিঁড়ির ২য় তলায়)।
৭. ভূতত্ত্ব বিভাগ—কবি সুফিয়া কামাল হল (নিচতলা)।
৮. ইউ ল্যাব স্কুল অ্যান্ড কলেজ—শামসুন নাহার হল (নিচতলা)।
ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাস
ডাকসু হিসেবে পরিচিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। এটি ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্বনাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গ্রহণ করা হয়। ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ বলা হয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হল এই ছাত্র সংসদ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে গৌরবময় ভূমিকা রাখে এই ছাত্র সংসদ। ৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।