স্বপ্ন হলো সত্যি, ঢাবিতে বরমচাল চা বাগানের প্রথম শিক্ষার্থী ইতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান ইতি গৌড়ের। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ইতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতেও তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাবিতেই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা বাগানে রাস্তার পাশে ছোট একটি টিলার ওপর ইতির ঘর। সেখানে বাবা ও বড় দুই বোন নিয়ে ইতির বসবাস। ইতির মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা-শ্রমিক। দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সের স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হলে ২০১৮ সালে চাকরি ছাড়তে হয় তাকে। তিনিও এখন অসুস্থ।
পরিবারের সংগ্রাম ও শিক্ষাজীবন
ইতির বড় বোন স্মৃতি গৌড়ের বিয়ে হয়েছে। স্মৃতির স্বামী ঢাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মেজ বোন সুইটি গৌড় ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। মা সুমিত্রা গৌড়ের নামে থাকা দুই বিঘা জমি এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা, ইতি ও সুইটির পড়াশোনা এবং ভর্তির খরচ চালানো হয়। বড় বোন স্মৃতি গৌড় পরিবারের বেশ খেয়াল রাখেন।
ইতি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন বরমচাল মিশন স্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে। ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং ২০২৪ সালে ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৮৩ পান।
স্বপ্ন পূরণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ায় ইতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন আগে থেকেই ছিল। এইচএসসির পর প্রস্তুতি শুরু করি। ঢাকা, শাহজালাল, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিই। জগন্নাথে ভালো হয়নি, জাহাঙ্গীরনগরে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকায় হতাশ হয়ে পড়ি। পরে শাহজালালে বিবিএতে চান্স পাই। দেরি না করে ভর্তি হয়ে যাই। এর কয়েক দিন পর ঢাবির ফল আসে, ফিন্যান্স বিভাগে সুযোগ পাই। তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। পরিচিতজনেরা ঢাবিতে ভর্তি হতে বলেন, তাই শাহজালাল থেকে ভর্তি বাতিল করে ঢাবিতে যাচ্ছি।
ইতির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও অনেক আনন্দ বিরাজ করছে। এই চা বাগান থেকে প্রথমবারের মতো কোনো চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
মেয়ের এই সাফল্যে খুশি হয়ে বাবা শংকর গৌড় বলেন, বাপেক্সে চাকরি করার সময় বড়বড় স্যার আসতেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তখন ভাবতাম, যদি আমাদের কোনো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারত! ঈশ্বর সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন। সুমিত্রা (স্ত্রী) নিশ্চয়ই অনন্তলোক থেকে মেয়েদের জন্য আশীর্বাদ করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ইতি বলেন, আগে ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করতে চাই। ভালো রেজাল্ট হলে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে না। ফিন্যান্সের পড়া শেষ করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে।