বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা হয় যেখানে

স্বাধীনতা যুদ্ধের মাত্র তিন বছরের মাথায়, অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস)। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এই অঙ্গসংগঠন আইবিএস থেকে দেওয়া হয় উচ্চতর ডিগ্রি এমফিল ও পিএইচডি। অথচ প্রতিষ্ঠার পর ৪১ বছর চলে গেলেও আজও এটি রয়ে গেছে অনেকটাই অগোচরে।
আইবিএসের অনেক গবেষণাকর্ম প্রমাণ করে দেয়, বাংলাদেশেও ভালো গবেষণা সম্ভব। তাই যাঁরা যশ-খ্যাতি বা স্বার্থের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের নানা বিষয় নিয়ে ভাবেন, উদ্ভাবন করতে চান বাংলার নতুন দিক, তাঁদের জন্য আইবিএস অন্যতম।
গবেষণা কার্যক্রম
আইবিএসে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় দুটি পর্যায়ে—এমফিল ও পিএইচডি। এমফিল কোর্স দুই বছর মেয়াদি আর পিএইচডি কোর্স তিন বছর মেয়াদি। আইবিএসে স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন মোট সাতজন। এ ছাড়া প্রতিবছর রাবির বিভিন্ন বিভাগের ১০ জন শিক্ষককে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গবেষকরা তাঁদের গবেষণা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আইবিএসের শিক্ষকদের পাশাপাশি সুপারভাইজার হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের বেছে নেন। এ পর্যন্ত আইবিএস থেকে এমফিল করেছেন ৭৯ জন আর পিএইচডি করেছেন ২২৪ জন। এমফিল ও পিএইচডি মিলে এর আসনসংখ্যা ৩০।
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খান সারোয়ার মুর্শিদের উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে আইবিএস, যার প্রথম পরিচালক করা হয় অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল কাদেরকে। এর বর্তমান পরিচালক ড. স্বরোচিষ সরকার। ১৯৭৪-৭৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়েই প্রতিষ্ঠানটির পথচলা, যার প্রমাণ মেলে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি উদ্দেশ্যের মধ্যেই।
এক. বাংলাদেশের ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, নৃবিজ্ঞান, আইন, বাণিজ্য, রাজনীতি, ধর্ম ও জীবন এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো বিষয়ে এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করার উপযোগী দক্ষ ও সৃজনশীল শিক্ষক ও গবেষকদল তৈরি করা।
দুই. পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে যেকোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণা প্রকল্প কার্যকর করা এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা।
তিন. দেশের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উন্নয়নকাজে সহায়তাদানের উদ্দেশ্যে গবেষণালব্ধ ফল সমগ্র জাতির সামনে তুলে ধরা।
চার. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ বিষয়ে যৌথ গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা।
পাঁচ. দেশের ভেতরে ও বাইরে ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ বিষয়টি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য কনফারেন্স ও সেমিনারের আয়োজন করা এবং প্রকাশনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
আইবিএস গবেষকদের সুযোগ-সুবিধা
ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, নৃতত্ত্ব, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, দর্শনসহ বাংলাদেশের নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ থাকলেও অনেকেই আইবিএস সম্পর্কে জানেন না। ফলে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।
আর্থিক সংকটের কারণে গবেষণার যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রতিষ্ঠানটি ফেলোশিপ প্রদান করে থাকে। দুই বছরের এমফিল গবেষকদের জন্য প্রতি মাসে এক হাজার পাঁচশ টাকার ফেলোশিপ দিয়ে থাকে আইবিএস। আর যেসব গবেষক তিন বছর মেয়াদি পিএইচডি গবেষণা করছেন, তাঁদের ফেলোশিপ হিসেবে প্রতি মাসে দেওয়া হয় দুই হাজার টাকা।
থাকার জন্য আবাসিক সুব্যবস্থাও রয়েছে। ব্যাচেলররা ডবল বেডের রুমে থাকতে পারবেন ২৭৫ টাকায়। আর যাঁরা পরিবার নিয়ে থাকতে চান, তাঁদের জন্যও রয়েছে সুব্যবস্থা। মাত্র ৫০০ টাকা দিয়েই চলার মতো একটি ঘর পেয়ে যাবেন। তবে আরো ভালোভাবে থাকতে চাইলে মাত্র ৭৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দিয়ে একটি ভালো বাসাও পাওয়া যাবে।
আইবিএস গবেষণা কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্সের আয়োজন করে থাকে। এ ছাড়া আইবিএসের রয়েছে ‘দ্য জার্নাল অব দি ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’ নামে একটি প্রকাশনা। গবেষকদের ব্যবহারের জন্য বেশ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে।
আইবিএসে গবেষণা করার যোগ্যতা
আইবিএসে গবেষণা করার জন্য প্রার্থীর কিছু ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা তো অবশ্যই প্রয়োজন। এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬১তম সিন্ডিকেট সভায় এমফিল ও পিএইচডিতে ভর্তির জন্য প্রার্থীদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা আগামী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে।
সিন্ডিকেটে এই যোগ্যতা পরিবর্তন আনার পর এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি প্রার্থীদের যে যোগ্যতাগুলো থাকতে হবে :
এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে
এক. প্রার্থীর অবশ্যই এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে যেকোনো একটিতে ন্যূনতম প্রথম বিভাগ ও অন্যটিতে ন্যূনতম দ্বিতীয় অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে উভয় পরীক্ষার প্রতিটিতে চতুর্থ বিষয়সহ ন্যূনতম জিপিএ ৪.২৫ থাকতে হবে।
দুই. কলা বা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলো থেকে উত্তীর্ণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে যেকোনো একটিতে ন্যূনতম ৫৫ ও অন্যটিতে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। তবে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে সিজিপিএ ৪ স্কেলের মধ্যে উভয় পরীক্ষার একটিতে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.২৫ এবং অন্যটিতে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে।
আইন/বিজ্ঞান/ব্যবসায় শিক্ষা/জীব ও ভূবিজ্ঞান/কৃষি/প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে উভয় ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.২৫ থাকতে হবে।
এমবিবিএস ও বিডিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। ডিভিএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৬০ শতংশ নম্বর অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে সিজিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে।
তিন. এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য যাঁদের উল্লিখিত যোগ্যতাগুলো নেই, তাঁরাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউজিসি অনুমোদিত সরকারি কলেজে ন্যূনতম তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা কিংবা স্নাতক পর্যায়ের বেসরকারি ডিগ্রি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, সে সঙ্গে কোনো স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের গবেষণাকাজের অভিজ্ঞতা এবং স্বীকৃত জার্নালে ন্যূনতম দুটি গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়ে থাকে।
শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়েই দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণি সিজিপিএ ৩.০০-এর কম থাকে, তাহলে প্রার্থী ভর্তির অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে
এক. প্রার্থীর এমফিল বা সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পিএইচডিতে ভর্তির জন্য এমফিল ডিগ্রি ছাড়াই সরাসরি প্রাথমিক আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন।
দুই. প্রার্থীর যদি এমফিলে ভর্তির ওপরে বর্ণিত যোগ্যতা থাকে এবং তিনি যদি ইউজিসি, সরকারি বৃত্তি বা বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ফেলোশিপ অর্জন করে থাকেন, তাহলে তাঁরা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তিন. এসব যোগ্যতা যেসব প্রার্থীর নেই, তাঁদের যদি এমফিলের ১ ও ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত যোগ্যতাসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ইউজিসি অনুমোদিত সরকারি কলেজে সাত বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে, স্নাতক পর্যায়ের বেসরকারি ডিগ্রি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে সাত বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, কোনো স্বীকৃতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সাত বছরের গবেষণাকাজের অভিজ্ঞতা, সে সঙ্গে কোনো স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সাত বছরের গবেষণাকাজের অভিজ্ঞতা এবং স্বীকৃত জার্নালে ন্যূনতম তিনটি গবেষণাকর্ম প্রকাশিত প্রকাশিত হলে তিনি এমফিল ছাড়াই পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। তবে শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়েই দ্বিতীয় বিভাগ বা সিজিপিএ ৩.০০-এর কম থাকে, তাহলে প্রার্থী ভর্তির অযোগ্য বলে গণ্য হবে।
বিস্তারিত জানতে লগইন করুন—dept.ru.ac.bd/ibs এই ঠিকানায়