বুয়েটে র্যাগিং ও রাজনীতিতে জড়ালে আজীবন বহিষ্কার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভবিষ্যতে র্যাগিং ও সাংগঠনিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে সর্বোচ্চ শাস্তি ‘আজীবন বহিষ্কার’ নির্ধারণ করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত নীতিমালা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করেছে বুয়েট প্রশাসন। এতে র্যাগিংয়ের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে কয়েক ধাপে।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে (২১) গত ৬ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েকজন নেতাকর্মী।
এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন, ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে বুয়েট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক কার্যক্রম এবং আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করে। এর আগে আবরার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
র্যাগিং ও রাজনীতির বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার পর আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সবকটি পূরণ হলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিন দফা দাবি আদায়ে প্রায় দুই মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বুয়েটে।
গতকাল রাতে জারি করা বুয়েটের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের এবং সাংগঠনিক রাজনীতির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িতদের অভিযোগসমূহ মূল্যায়ন ও শান্তি নির্ধারণ বিষয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্টের আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শান্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।’
নতুন নীতিমালায় র্যাগিংয়ের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে কয়েক ধাপে। কোনো ছাত্রের মৃত্যুর শাস্তি বুয়েট থেকে বহিষ্কার ও থানায় মামলা দায়ের।
কোনো ছাত্র গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে।
মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং সাময়িক মানসিক ক্ষতিসহ এ সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা।
এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেওয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সেলিং করতে হবে বলে নির্ধারণ কনরা হয়েছে নতুন নীতিমালায়।
এ ছাড়া জারি করা নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, বুয়েটে কেউ সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করলে সর্বোচ্চ সাজা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার। এতে আরো বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি সতর্কতা, জরিমানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো মেয়াদে বহিষ্কার।