কাদের ইচ্ছায় পোশাক পরিধান নির্দেশনা খতিয়ে দেখার দাবি

নারী কর্মীদেরকে কর্মক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ ও লেংথের (ছোট হাতা ও দৈর্ঘ্যের) পোশাক ও লেগিংস পরিহার করতে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে পুরুষ কর্মীকে জিন্স, গ্যাবার্ডিন ও স্যান্ডেল না পরার নির্দেশনা দেয় ব্যাংকটি। পরে নির্দেশনাটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা ও নানা বিতর্কের মুখে পড়েন ব্যাংকটি কর্তৃপক্ষ। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকটির গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের হস্তক্ষেপে এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বেসরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে পোশাক পরিধান নিয়ে মোটাদাগে লিখিত নির্দেশনা থাকলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে পোশাক পরিধানে লিখিত তেমন কিছু থাকে না। তবুও সেখানে (সরকারি প্রতিষ্ঠান) আনুষ্ঠানিক মানানসই পোশাক পরিধান করছে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীরা পোশাক পরিধানে খুবই সচেতন। তাদের পোশাক শালীন, রুচিসম্মত ও ফরমাল- ঠিক এমন এক প্রতিষ্ঠানের কর্মস্থলে কোন ধরনের পোশাক পড়া যাবে কিংবা যাবে না জানিয়ে নির্দেশ রীতিমতো অপমানের। একইসঙ্গে ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব বলে মনে করেছেন ব্যাংকের কর্মীরা। যদিও কর্মীদের সমালোচনা ও নানা চাপে সেই পোশাক পরিধান নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও পোশাক পরিধান নির্দেশনা কেন দেওয়া হলো, কারা দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য, ব্যাংকটির মাসিক এজেন্ডায় এটা কীভাবে স্থান পেল- এসব খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মীরা।
কেউ অশালীন পোশাক পরতেন কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, কেউ অশালীন পোশাক পরেছেন এমন অভিযোগ নেই। এখানে সবাই শালীন ও ফরমাল পোশাক পরিধান করেন। এখানে কর্মীদের কাজের পরিবেশও ভালো। কোনো ধরনের সমস্যাও নেই।
এখন একেক ব্যাচে প্রায় ২৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তরুণেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিতে প্রবেশ করছেন জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, তাদের মধ্যে এমন আচরণের প্রবণতা রয়েছে। বেশ কিছুদিন এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পোশাক কি পরতে হবে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পোশাক পরিধান বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই পোশাক পরিধানের সেই নির্দেশনা ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নির্দেশে এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পোশাক পরিধানের নির্দেশনা প্রসঙ্গে আরিফ হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগীয় সভায় সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অফিস সময়ে শালীন পোশাক পরিধানের বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ দেওয়া হলেও তা ছিল শুধু প্রস্তাবনা পর্যায়ে। বিষয়টি কোনোভাবেই বাধ্যতামূলক নির্দেশনা বা নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল না। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এবং তা বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নজরে এলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার নির্দেশে এই অভ্যন্তরীণ আলোচনা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পুরো বিষয়টি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর আগে গত ২১ জুলাই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পোশাকের ধরন নিয়ে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় নারী কর্মীদেরকে শর্ট স্লিভ ও লেংথের (ছোট হাতা ও দৈর্ঘ্যের) পোশাক ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়। তাদেরকে শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরতে বলা হয়। পাশাপাশি তাদেরকে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া যারা হিজাব পরেন, তাদেরকে সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়। অপরদিক পুরুষ কর্মীদেরকে জিন্স ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করে লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল শার্ট ও প্যান্ট পরতে বলা বলা হয়। নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে বলে সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছিলেন, কর্মক্ষেত্রে অনেকেই অনেক দামি ও গর্জিয়াস পোশাক পরেন। আবার অনেকেই কম দামি ও সাদামাটা পোশাক পরেন। এতে কর্মক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্যের পথ তৈরি হয়। এটাকে নিয়ন্ত্রণে সবাই এক ধরনের পোশাক পরবে, সেই লক্ষ্য থেকেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওইদিন মুখপাত্র বলেন, পোশাক নিয়ে যেন সাম্য ও ঐক্য থাকে, কোনো ধরনের মানসিক বৈষম্য না থাকে। আর শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক। হিজাব পরতে বাধ্য করা হচ্ছে না জানিয়ে আরিফ হোসেন খান বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়। তবে যারা হিজাব পড়বেন, তাদেরকে সাদামাটা রঙের হিজাব পরতে হবে। এই নির্দেশনা শুধু অফিসের জন্য প্রযোজ্য। কেউ ব্যক্তিগত পরিসরে যেকোনো পোশাক পরতে পারবেন।